করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বহুগুণ বাড়ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত এক মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০৯ জন। বর্তমানে ৫৪১ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা রোগীর হাসপাতালে আসার সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। ফলে রোগীদের ভর্তি করার পর তাঁদের বেড নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের মেডিকেলে করোনা রোগী আসার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। প্রথমে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটকে করোনা ইউনিট করলাম। সেখানে ২৫০–৩০০ জন রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। রোগী ভর্তির অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বার্ন ইউনিট রোগীতে ভরে যায়। পরে আবার আমরা ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন ব্লকে করোনা রোগী ভর্তি শুরু করলাম। দিন যত যাচ্ছে, করোনা রোগী আসার হার কিন্তু অনেক বাড়ছে। যে হারে করোনা রোগী আসছে, তাতে ভবিষ্যতে সব রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের চিকিৎসকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।’
প্রায় তিন মাস আগে গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ধরা পড়ে। এরপর উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল। দেশে করোনায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ার প্রেক্ষাপটে গত ২ মে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করোনা রোগীদের ভর্তির কার্যক্রম শুরু করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬৩ হাজার ২৬ জন। মারা গেছেন ৮৪৬ জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, গত এক মাসে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ২ হাজার ৩০৯ জন রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০৯ জন রোগী, যাঁরা সবাই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৮১৩ জন।
তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে গত এক মাসে কতজন মারা গেছেন, সে ব্যাপারে তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তির প্রথম ১৪ দিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১২১ জন মারা যাওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। প্রথম ১৪ দিনে মারা যাওয়া ১২১ জনের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ১৮ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে মারা যাওয়া ১০৯ জনের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তির সংখ্যা ৩৫ জন। আর ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী ব্যক্তির সংখ্যা ১৯ জন, ৭১ থেকে ৮০ জনের মধ্যে ১১ জন।
হাসপাতালটির পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সব জায়গা ঘুরে তারপর আমাদের মেডিকেলে আসছে করোনার রোগীরা। সব থেকে ক্রিটিক্যাল রোগীরা আমাদের হাসপাতালে এসে ভর্তি হচ্ছেন। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশ বয়স্ক রোগী।’
কোভিড শিশুর সঙ্গে মা
করোনায় আক্রান্তরা শিশুদের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আলাদা জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২২ জন শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এসব শিশুর সঙ্গে তাঁদের মায়েরা থাকেন বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিষেধ করার সত্ত্বেও কোভিডে আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে তাঁদের মায়েরা থাকেন। কোভিডে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার বিষয়টি কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক মুজিবুর রহমান। এক মাসে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে করোনার রোগী আসার হার বহুগুণ বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে হাসপাতালে রোগীরা বেড পাচ্ছেন না। আমরা যদি এখনো সচেতন না হই, যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি, তাহলে এই রোগী আসার হার আরও বেড়ে যাবে। কঠিন সময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’
মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা যাঁরা চিকিৎসা পেশায় আছি, আমরা কিন্তু জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যখন হাসপাতালের বাইরে আসি, দেখছি, মানুষ মোটেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। অনেকে মুখে মাস্কও পরছেন না। ফলে করোনার ঝুঁকি কিন্তু অনেকে গুণ বেড়ে যাচ্ছে।’