দেশে এক দিনেই করোনাভাইরাসে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন। আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬২১ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৪ জন। এ ছাড়া মোট সংক্রমিত ৬২১ জনের মধ্যে ৫০ শতাংশ ঢাকা শহরে, ৩৫ শতাংশ ঢাকার বাইরে ঢাকা বিভাগের বাকি জেলাগুলোতে, আর চট্টগ্রাম বিভাগে আছেন ৬ শতাংশ, এ ছাড়া অন্যান্য জেলায় আছেন ৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে দেশের ৩৮ জেলায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে করোনা পরিস্থিতির সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৩৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। নতুন সংক্রমিত ১৩৯ জনের মধ্যে ৯৬ জন পুরুষ ও ৪৩ জন নারী। তাদের ২৫ শতাংশের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আক্রান্তদের ২১ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা বয়সভিত্তিক বিভাজন দেখাচ্ছি, যে কোনো বয়সের যে কোনো ব্যক্তি কিন্তু সংক্রমিত হতে পারেন।
সুতরাং এসব ক্ষেত্রে প্রতিরোধের বিষয়ে কোনো বয়সসীমা নেই। প্রত্যেককেই প্রতিরোধের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজন সুস্থ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৩৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সুস্থ তিনজনের মধ্যে একজন পুরুষ ও দুজন নারী। তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন চিকিৎসক, যিনি করোনা আক্রান্ত রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি জানান, নতুন মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী দুজন, ৬০ বছর বয়সের মধ্যে একজন ও ৭০ বছর বয়সের মধ্যে আছেন একজন। চারজনের মধ্যে দুজন ঢাকায় এবং দুজন ঢাকার বাইরে মারা গেছেন।
আইইডিসিআর পরিচালক জানান, দেশের মোট সংক্রমিত ৬২১ জনের মধ্যে ৫০ শতাংশ ঢাকা শহরে, ৩৫ শতাংশ ঢাকা ছাড়া ঢাকা বিভাগের বাকি জেলাগুলোতে এবং চট্টগ্রাম বিভাগে আছেন ৬ শতাংশ। দেশে নতুন করে আরও চারটি জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও ঝালকাঠি জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এ চার জেলায় সংক্রমিতরা গত এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে জেলাগুলোতে গিয়েছেন। বিভিন্ন জেলায় নতুন সংক্রমিত যাদের পাওয়া যাচ্ছে, তারা ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ থেকে সেখানে গিয়েছেন বলে জানান তিনি। জেলাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকায় নতুন রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬২ জন। বাকি ৭৭ জন বিভিন্ন জেলার। এ নিয়ে মোট ৩৮টি জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ল। তবে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় এখনো কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা ঝোরা উপস্থিত ছিলেন ব্রিফিংয়ে। তিনি জানান, রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে এক হাজার ২৫১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে এক হাজার ৩৪০টি নমুনা। শনিবারের কিছু স্যাম্পল, যেটি পরে এসেছিল, সেটি রবিবার পরীক্ষা হয়েছে। সে জন্য স্যাম্পলের চেয়ে পরীক্ষার সংখ্যা বেশি আমরা দেখতে পাচ্ছি। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরে এখন চার লাখ ৬৮ হাজার ৪৪২টি পিপিই মজুদ আছে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৯ হাজার ১১১ জন। আর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন এক হাজার ৪১৪ জন।
ঢাকা মহানগরে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গতকাল সকাল পর্যন্ত ছিল ৩২৩ জন। এ পর্যন্ত মহানগরের ৭৬টি এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে টোলারবাগে। এ সংখ্যা এখন ১৯-এ দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে উত্তরায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৭, ওয়ারীতে ১৬, ধানমন্ডিতে ১৪, লালবাগে ১৩, মোহাম্মদপুর ও বাসাবোতে ১২, যাত্রাবাড়ীতে ১১ ও মিরপুর ১১-তে ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া মিরপুর ১২-তে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন ৮।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ঢাকার ৫২টি জায়গা লকডাউন করা হয়েছে। আইইডিসিআর জানায়, গতকাল পর্যন্ত দেশের ১৯ জেলাকে সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো শেরপুর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, গাজীপুর, গাইবান্ধা, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, জামালপুর, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, সাতক্ষীরা, রংপুর, পিরোজপুর, চাঁদপুর, নরসিংদী ও শরীয়তপুর। এর বাইরে আংশিক লকডাউন জারি আছে আরও ১৬টি জেলায়।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুসারে, যশোরে একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তিনি মনিরামপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মী। ওই উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নে কর্মরত ছিলেন তিনি। অসুস্থ হওয়ার পর তিনি মুজগুন্নি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেই ভাড়াবাড়ি, মশ্মিমনগরে তার নিজের বাড়ি এবং মুজগুন্নিতে শ্বশুরবাড়ি লকডাউন করার প্রস্তুতি চলছে। চাঁদপুরে একজন চিকিৎসকসহ আরও দুজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ জেলায় করোনা আক্রান্ত হলেন চারজন। কুমিল্লায় বাবার পর ১২ বছরের মেয়েও করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। নীলফামারীতে নতুন করে এক ছাত্রের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকার ১৪টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আরও এক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তিনি নারী। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় নতুন আরও একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি ২৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে যান। এদিকে গাজীপুরের সিভিল সার্জন অফিসের এক নিরাপত্তাকর্মীর করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার কারণে সিভিল সার্জনসহ ওই অফিসের ১৩ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মালয়েশিয়া প্রবাসী এক ব্যক্তির করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার খবরে তিন চিকিৎসক ও এক ফার্মেসি মালিককে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া আখাউড়ার এক নারীর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
এরপর তার বাড়িসহ আশপাশের এলাকা লকডাউন করা হয়। নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে সম্প্রতি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় এসেছেন পাঁচ ব্যক্তি। খবর পেয়েই শনিবার তাদের নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা প্রশাসন। পরে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। করোনা সন্দেহে নাটোরে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।