মাকে দেবী ভেবে পূজা করলেন সন্তানেরা

মাকে দেবী মনে করে তাঁকে পূজা করেছেন সন্তানেরা। শারদীয় দুর্গাপূজার পঞ্চমীতে মাদারীপুরে অর্ধশত ব্যক্তি নিজ নিজ মাকে পূজা করেছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার পূর্ব কলাগাছিয়া নকুল কুমার বিশ্বাস সাহিত্য সংগীত একাডেমিতে এই পূজা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজক শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস পূজায় পৌরোহিত্য করেন।

আয়োজকেরা জানান, শঙ্খ ও ঢাক বাজিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে নিজ মাকে পূজা করলে সব দেবতাকে এর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। এবার দেবী দুর্গা অশুভ শক্তিকে দমন ও দেশের শান্তি কল্যাণে মর্ত্যে আসছেন। দেবীকে মনপ্রাণ দিয়ে পূজা করে, বাস্তবে অনুসরণ করে সিদ্ধিলাভ কারও কাছেই সহজ নয়। তাই পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামে পূজার শুরুর আগেই অর্ধশত মায়ের পূজা করলেন নিজ সন্তানেরা। সন্তানেরা মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে, মায়ের পা ধুইয়ে বেলপাতা ও পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে বিগত দিনের অপরাধের জন্য মায়ের কাছে ক্ষমা চান।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে নিজ নিজ সন্তানের সামনে বসে আছেন মায়েরা। মায়ের পায়ের কাছে বসে সন্তানেরা তাঁর পূজা করছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে এই মাতৃপূজার আয়োজন। স্থানীয় ব্যক্তিদের মতে, প্রত্যেক সন্তান যদি তার মাকে প্রতিনিয়ত ধ্যানে-জ্ঞানে পূজা করে, তবে তাদের মধ্যে মাতৃভক্তি উদয় হবে। দেশে আর কোথাও কোনো বৃদ্ধাশ্রম থাকবে না। ফলে সন্তানের ভালোবাসায় মা চিরকাল হাসিখুশি থাকবেন। বিশ্বের প্রতিটি ঘরে এভাবে সন্তান তার মাকে ভালোবেসে ভক্তিভরে পূজা করবে—এটাই অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বিষয়।

রাজৈরের বাজিতপুর থেকে এসেছেন নির্মলানন্দ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানদের স্বর্গ। আমাদের ধর্ম গ্রন্থে রয়েছে, যে ব্যক্তি ভক্তিভরে মায়ের পূজা করেন, দেবতারা তাঁরই পূজা করেন। তাই মাকে প্রাণভরে পূজা করলে সন্তানের সব মনস্কামনা ঈশ্বর পূরণ করবেন। ফলে কোনো মা কষ্ট থাকবেন না।’

মায়ের পেয়ে পূজা দিতে পরে খুশি হয়েছেন স্থানীয় শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র বেপারী (৪০)। তিনি বলেন, ‘আমি এত বড় হয়েছি, কিন্তু কখনো সবার সঙ্গে একত্র হয়ে মায়ের পা ধরে পূজা করতে পারব ভাবিনি। আজ (সোমবার) মায়ের পায়ে ফুল, চন্দন, তুলসীপাতা, বেলপাতা, দূর্বা দিয়ে পূজা দিতে পেরে অনেক খুশি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি আমার বৃদ্ধ মায়ের পূজা করতে চাই।’

কলাগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা চায়না মণ্ডল বলেন, ‘আমার মেয়ে তমা মণ্ডল (১৯) আজ আমাকে পূজা করছে। সন্তানের এমন ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি যেন আমার মেয়ে দীর্ঘজীবী হতে পারে।’

আয়োজক নকুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের মূল কারণ মা যাতে খুশি থাকেন। কারণ, আমাদের এ পৃথিবীতে মায়ের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু হতে পারে না। মায়েদের জন্য নির্মিত বৃদ্ধাশ্রমগুলো আমরা বন্ধ করে দিতে চাই। ভালোবাসা দিয়ে মাকে তাঁর সন্তানের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই।’

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ

Scroll to Top