২০ দিন ধরের নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাসের সন্ধান দিতে প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়েছেন সাংবাদিকরা। এ সময়ের মধ্যে তাকে খুঁজে না দিলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উৎপলের সন্ধান দিতে না পারলে বুধবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব পুলক ঘটক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী ও ইলিয়াস খান, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ঢাকা সাব এডিটর কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক উম্মুল ওয়ারা সুইটি, তাসকিনা ইয়াসমিনসহ অনেকে।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, এতদিন সাংবাদিকেরা অন্যদের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ লিখে আসছেন। এখন তারা নিজেরাই এর শিকার। সাংবাদিক সমাজ উৎপলকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে চান। তারা উৎপলকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, উৎপলকে আগামী ৪৮ ঘন্ঠার মধ্যে ফিরিয়ে দিতে হবে। নইলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো, রাজপথ বন্ধ রাখবো। এ জন্য অামরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী বলেন, উৎপলের সন্ধানের জন্য সরকারের সব মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একজন সাংবাদিক হারিয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোন বক্তব্য নেই। তথ্যমন্ত্রীর কোন বক্তব্য নেই, এর নিন্দা জানাচ্ছি। সাংবাদিক উৎপলের কোন খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, আমরা শুনেছি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা নাকি অনেক দক্ষ। কিন্তু সাংবাদিক উৎপল দাসকে খুঁজে পেতে তাদের দক্ষতার কোন পরিচয় পায়নি। উৎপলকে খুঁজে দিতে পারলে আমরা বুঝবো আমাদের গোয়েন্দারা দক্ষ।
১০ অক্টোবর নিখোঁজ হন পূর্বপশ্চিমবিডিডটনিউজের রিপোর্টার উৎপল দাস। ২৯ বছর বয়সী এ সাংবাদিকের নিখোঁজের ঘটনায় মতিঝিল থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তার সন্ধানে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ১০ অক্টোবর দুপুরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের কাছাকাছি কোনো জায়গায় অবস্থান করছিলেন উৎপল। দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে পাবনা ছাত্রলীগের এক নেতার সঙ্গে তার কথা হয়। এটিই ছিল তার সর্বশেষ ফোনালাপ। ১টা ৪৭ মিনিটে উৎপলের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তার অবস্থান সম্পর্কে জানা যাচ্ছে না। তবে গত সোমবার উৎপলের মোবাইল নম্বর নকল করে স্পুফিং কল করে পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, উৎপল তাদের কাছে আটক আছে। এক লাখ টাকা দিলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। রোববার রাত ১০টার দিকে উৎপল দাসের ফেসবুক আইডি থেকে তার এক বান্ধবীকে ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে। ম্যাসেঞ্জারে একটি ছোট গল্প পাঠানো হয়েছে বলে ওই বান্ধবী নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় উৎপলের গ্রামীণ নম্বরে তার বড় বোন কল দিয়ে নম্বর খোলা পান। পরপর তিনবার কল হওয়ার পর নম্বরটির সংযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে উৎপলের সহকর্মী এজাজুল হক মুকুলকে জানিয়েছেন উৎপলের বাবা চিত্ত দাস।
উৎপলের একজন বন্ধু জানিয়েছেন, তারা উৎপলের মোবাইল ও ফেসবুক মেসেঞ্জার মাঝে মাঝে সক্রিয় থাকার বিষয়টি র্যাব ও পুলিশকে জানিয়েছেন। তারা এর সূত্র ধরে তার অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
নিখোঁজ সন্তানের খোঁজ চেয়ে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন উৎপলের বাবা চিত্ত রঞ্জন দাস। এ সময় তার বড় দুই বোন ও এক ভাই এবং সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে উৎপলের নিখোঁজ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এক বিবৃতিতে আসক বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উৎপল দাসের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে হবে। পদক্ষেপও নিতে হবে যথাযথ।
সাংবাদিক উৎপল দাসের নিখোঁজের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে। এক বিবৃতিতে বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক, ডিইউজে সভাপতি শাবান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, গত ১০ অক্টোবর থেকে উৎপল দাস নিখোঁজ হলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ না পাওয়া উদ্বেগজনক। সোমবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে তরুণ এ সাংবাদিকের ২৯তম জন্মদিনে তার বন্ধু-সহকর্মীরা কেকের বদলে রাস্তায় মোমবাতি জ্বালিয়ে অশ্রুসজল চোখে তার সন্ধান চেয়েছেন।
উৎপলকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বুধবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।
উৎপল ফকিরাপুল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরার রাধানগরে। উৎপলের বাবা চিত্ত দাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক৷ এখন তিনি স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ৷