ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ে দিনের বেলা মসজিদের ইমামতি করেন আর রাতে জিনের বাদশা সেজে প্রতারণা করে গত দুই বছরে এলাকার এক যুবকের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কামরুল ইসলাম ওরফে কালা রতন নামে এক প্রতারক।
এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর স্থানীয় লোকজন প্রতারককে আটক করেন। শুক্রবার রাতে বিচারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ২৫ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতারক কামরুল ইসলাম ওরফে কালা রতন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের কাঁজা গ্রামের শাহজাহান দপ্তরীর ছেলে কামরুল দপ্তরী এলাকার এক মেয়ের সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলেও মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। এতে কামরুল দপ্তরী মনোকষ্ট সব সময় বিষণ্ণ থাকেন। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করেন না। এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ান। কামরুল দপ্তরীর এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে একই গ্রামের ফালু মিয়ার ছেলে ও স্থানীয় কুমার বাড়ি মসজিদের সভাপতি কাম ইমাম কামরুল ইসলাম ওরফে কালা রতন প্রতারণণার ফাঁদ পাতেন।
প্রেমে ব্যর্থ কামরুলের মোবাইল ফোনে গভীর রাতে কালা রতন ফোন করে নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে সারাদিন কোথায় কি করেছে তার হুবহু বর্ণনা দেয়। এতে কামরুল ভয় পেয়ে যায়।
কালা রতন কামরুল দপ্তরীকে ধমক দিয়ে বলে, ‘আমার কথা মতো কাজ করলে প্রেমিকাকে ফিরে পাবি। তোর মঙ্গল হবে। আর কথা মতো কাজ না করলে চরম বিপদে পরবি।
কালা রতন কামরুলকে বাড়ির পাশের ঝোপের মধ্যে টাকা রেখে পেছন না ফিরে বাড়ি যেতে বলে। কামরুলও জিনের বাদশা কালা রতনের নির্দেশ মতো কাজ করে। এভাবে গত দুই বছরে কালা রতন ওরফে জিনের বাদশা কামরুল দপ্তরীর কাছ থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গত বুধবার রাতের বেলা কালা রতনের প্রতারণা ধরা পরে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে। শুক্রবার রাতে প্রতারণার শিকার কামরুল ভগ্নিপতি আব্দুল কুদ্দুসের ভালুকার বাসায় লংগাইর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন বিপ্লব, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন সরদার ও আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে বিচার সালিশ বসে। সেখানে প্রতারক কালা রতন তার কৃতকর্মের কথা কথা স্বীকার করে প্রথম কিস্তিতে সাড়ে ৬ লাখ টাকা ফেরত এবং বাকি টাকা পর্যায়ক্রমে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে প্রতারক কালা রতনকে মুচলেকা রেখে মুক্তি দেওয়া হয়।
প্রতারণার শিকার কামরুল বলেন, গভীর রাতে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে চিকন স্বরে এমন ভাবে কথা বলতো যে বিশ্বাস না করে উপায় ছিল না। আমি আসলে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। প্রায় ২৫ লাখ টাকা গচ্চা দেওয়ার পর আমার হুঁশ ফিরেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, সালিশে আমি ছাড়াও লংগাইর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন বিপ্লব ছিলেন। লংগাইর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন বিপ্লব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।