৯২০ কোটি টাকা পাচারে আসামির তালিকায় আব্দুল আজিজ

পণ্য রপ্তানির নামে ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ক্রিসেন্ট গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এতে ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ এবং রিমেক্স ফুটওয়ার লিমিটেডের চার কর্মকর্তা এবং জনতা ব্যাংকের তৎকালীন ও বর্তমান ১৩ অফিসার মিলিয়ে মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে ক্রিসেন্ট লেদার ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরকে গ্রেফতারও করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

বুধবার (৩০ জানুয়ারি) এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, ক্রিসেন্ট গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদার ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ, রিমেক্স ফুটওয়্যার ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এই অর্থপাচারের অভিযোগে বুধবার রাজধানীর চকবাজার থানায় প্রতিষ্ঠান তিনটির নামে আলাদা আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ক্রিসেন্ট লেদার ও ট্যানারিজ এবং রিমেক্স ফুটওয়ারের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদার ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) তাকে আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হবে। মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেফতার করা হবে।

আসামি রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান (জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার) আব্দুল আজিজ, এমডি লিটুল জাহান (মিরা) এবং ক্রিসেন্ট লেদার ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের এমডি সুলতানা বেগম মনি যেন দেশের বাইরে চলে যেতে না পারেন, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বাংলানিউজতিনি জানান, ক্রিসেন্ট গ্রুপের অর্থপাচারের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতায় জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তা ও ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এফটিডির (এক্সপোর্ট) তৎকালীন ডিজিএম ও জিএম এবং বিভাগীয় কার্যালয়ের জিএমসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এরা হচ্ছেন- জনতা ব্যাংকের জিএম মো. রেজাউল করিম, সাবেক জিএম মো. জাকির হোসেন (বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি) ও ফখরুল আলম (ডিএমডি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক), ডিজিএম কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ, এ কে এম আসাদুজ্জামান ও মো. ইকবাল, এজিএম মো. আতাউর রহমান সরকার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. খায়রুল আমিন ও মো. মগরেব আলী, প্রিন্সিপাল অফিসার মুহাম্মদ রুহুল আমিন, সিনিয়র অফিসার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মনিরুজ্জামান ও মো. সাইদুজ্জাহান। উল্লিখিত তালিকার আতাউর রহমান সরকার থেকে পরের সবাই সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন।

অর্থপাচারের এ তালিকায় আরও এক ডজন প্রতিষ্ঠান রয়েছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, শিগগির বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মিলে সব ধরনের তথ্য-প্রমাণের পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাদকের মতোই অর্থপাচারও বিষাক্ত, এর থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে উল্লেখ করে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও রফতানির সুযোগ থাকার পরও কেন টাকা পাচার হচ্ছে? আসলে যারা টাকা পাচার করেন, তারা ভোগ করতে পারেন না। আমরা আগে শুনতাম সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার ঘটনা। কিন্তু তারাও টাকা ফেরত দেয় না বলে শোনা যায়। অথচ অনেকে দেশের ব্যাংকের টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।

Scroll to Top