আলিশান বাড়ির মালিক যখন হাসপাতালের ওষুধ চোর

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে কর্মরত সুধাংশু শেখর বাড়ই, একজন সামান্য ফার্মাসিস্ট ইনচার্জ। নিম্নপদের চাকরি করেও অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক তিনি। নগরীর বয়রা এলাকায় রয়েছে তার আলিশান বাড়ি। ২১ আগস্ট ওই হাসপাতাল থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধ চুরির ঘটনা ধরা পড়ার পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন সুধাংশু। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে তাকে শোকজ করা হয়েছে।

অপরদিকে, একই প্রতিষ্ঠানে একই পদে কর্মরত অপর ফার্মাসিস্ট দেব প্রসাদ রায় ও তার শ্যালক দীপঙ্কর সানা বিপুল পরিমাণ চোরাই ওষুধসহ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। তবে তাদের রক্ষায় দেব প্রসাদের স্ত্রী কল্যাণী রায় তাৎক্ষনিক গোয়েন্দা পুলিশকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা উৎকোচ দেওয়ার চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। দুলাভাই-শ্যালক এখন খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া কর্মরত আরও দুই ফার্মাসিস্ট ওষুধ চুরির বিষয়ে কতটুকু অবহিত তার ব্যাখ্যা চেয়ে তাদেরও চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. বিধান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, ‘হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ইনচার্জ সুধাংশু শেখর বাড়ইকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার আরও দুই ফার্মাসিস্ট গৌতম সরকার ও মাধবী লতা ওষুধ চুরির বিষয় কতটুকু অবহিত, তার ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে তিন দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

তদন্ত কমিটির প্রধান ও হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এস এম মোর্শেদ বলেন, ‘২১ আগস্ট সকালে হাসপাতাল থেকে চুরি করা ওষুধসহ ফার্মাসিস্ট দেব প্রসাদ রায় ডিবি’র হাতে গ্রেফতার হলে ওইদিন সকাল ৯টায় ফার্মাসিস্ট ইনচার্জ সুধাংশু শেখর বাড়ই অফিসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তার কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি উধাও হয়ে যান। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পর্যন্ত বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাকে ২৩ আগস্ট শোকজ করা হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার নগরীর বয়রা শ্মশান ঘাট রোডের সুধাংশু শেখর বাড়ই’র ‘সুধানীড়’ নামক বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। সেখানে তিনি বিশাল ভবন নির্মাণ করেছেন। ভবনের একদিকে তিনতলা এবং অন্যদিকে চারতলা পর্যন্ত উঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর তার স্ত্রী জানান, তার স্বামী বাড়িতে নেই, কোথায় গেছে এবং কবে আসবে- সেটিও তাকে বলে যায়নি।

নগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এ এম কামরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের ওষুধ চুরির সাথে কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। যারমধ্যে রাঘব বোয়ালরা জড়িত রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ইনচার্জ সুধাংশু শেখর বাড়ইকে খোঁজা হচ্ছে, সে আত্মগোপনে রয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ২১ আগস্ট নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম মুজগুন্নী পাম্পের সামনে থেকে আবু নাসের হাসপাতাল থেকে চোরাইকৃত দুই ব্যাগ ভর্তি ওষুধসহ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট দেব প্রসাদ রায় ও তার শ্যালক দীপঙ্কর সানাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিক্রি নিষিদ্ধ ২০ হাজার পিস সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও ১৭ হাজার পিস ইসোওমেপ্রোজল ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ক্রেতা হেরাজ মার্কেটের ইমা ড্রাগসের মালিক শেখ রকিবুল আবেদীনকেও আটক করা হয়।

বাংলাদেশ সময় : ১৯১৪ ঘণ্টা, ২৭ আগস্ট, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ