পাঁচ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও প্রায় ৪৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন, তার স্ত্রী শাহরিন আক্তার শিল্পী ও ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের নামে তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রবিবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পিএসসির আলোচিত গাড়িচালক আবেদ আলীর ১২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ কোটি ৮৮ লাখ ১৬ হাজার ৯৭১ টাকা জমা ও ২০ কোটি ৪১ লাখ ৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মোট ৪১ কোটি ২৯ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া, তিন কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রয়েছে।
পাশাপাশি তার স্ত্রী শিল্পী ও তার ছেলে সিয়ামের নামেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার দুটি ব্যাংক হিসাবে এক কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৬ টাকা জমা ও এক কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫ টাকা উত্তোলনসহ মোট তিন কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৩১ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, আবেদ আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সিয়ামের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৩০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুস’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে উহার রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তর করার দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছরের জুলাইয়ে বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। সেই সময় তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি থেকে আবেদ আলীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে ২২ এপ্রিল নন-ক্যাডারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তখন এক পরীক্ষার্থীকে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের অবৈধ উত্তরসহ চারটি লিখিত উত্তরপত্র হাতেনাতে আটক করা হয়। ওই মামলার তদন্তে আবেদ আলীর সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য প্রমাণ মেলে। এরপর তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এক সময় কুলির কাজ করা আবেদ আলী গাড়ি চালানো শিখে পিএসসিতে চাকরি নেন। এরপর প্রশ্ন ফাঁস চক্রে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিজ এলাকায় শিল্পপতি বনে যান। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত অভিযোগে আবেদ আলী ও তার ছেলে সিয়ামকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৯ জুলাই রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডের নিজ ফ্ল্যাট থেকে তারা গ্রেফতার হন। অভিযানে গ্রেফতার করা হয় পিএসসির দুই উপ-পরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ আরও ১৫ জনকে।