গোপালগঞ্জে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা সাড়ে তিন লাখ টাকায় মীমাংসা করার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার বিকেলে কোটালীপাড়া উপজেলার একটি গ্রামে এ অভিযোগ উঠে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, কোটালীপাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লহ্মী রানী সরকার এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে সালিশ বসিয়ে ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসা করে দেন।
সালিশে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত খোকন বৈদ্যর ছেলে অনিক বৈদ্যকে ৭৫ হাজার টাকা, রামগোবিন্দ বৈদ্যর ছেলে দিপংকার বৈদ্যকে ৭৫ হাজার টাকা, নির্মল বৈদ্যর ছেলে রনি বৈদ্যকে ৫০ হাজার টাকা, তারন বৈদ্যর ছেলে শিমুল বৈদ্যকে ৫০ হাজার টাকা ও বিমল বৈরাগীর ছেলে তমাল বৈরাগীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সালিশে তাৎক্ষণিকভাবে এ টাকা আদায় করার পর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরার কাছে টাকা গচ্ছিত রাখা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার রাতে ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ রাতেই মামলার প্রধান আসামি অনিক বৈদ্যকে গ্রেফতার করেছে। মামলার অপর আসামিরা হলেন-দিপংকার বৈদ্য (২৫), রনি বৈদ্য (১৮), শিমুল বৈদ্য (১৯), তমাল বৈরাগী (১৯) ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা শিশির বিশ্বসের ছেলে সুমন বিশ্বাস (২০)।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী মন্দির থেকে কীর্তন শুনে বাড়ি ফিরছিল। পরে অনিক বৈদ্যর নেতৃত্বে আসামিরা রাস্তা থেকে ওই ছাত্রীকে জোর করে ধরে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।
এ ঘটনার পর ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রীর বাবা মামলা করার পদক্ষেপ নিলে ধর্ষকদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হয়। ওই স্কুলছাত্রী বাবা বলেন, আমার অসম্মতিতে শনিবার বিকেলে বৈদ্য বাড়ির সালিশে ধর্ষকদের সাড়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। পরে রাতে আমি বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় মামলা দায়ের করি।
সালিশে উপস্থিত থাকা নারী ভাইস চেয়ারম্যান লহ্মী রানী সরকার ধর্ষকদের সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করার কথা স্বীকার করে বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে এ টাকা আদায় করা হয়। তবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা সাড়ে তিন লাখ টাকা তার কাছে গচ্ছিত রাখার কথা অস্বীকার করে বলেন, শনিবার বিকেলে সালিশে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এ উদ্যোগ সফল হয়নি। ঘটনা মীমাংসা হলে রাতে থানায় মামলা হতো না, পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতো না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোটালীপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদৎ হোসেন বলেন, ধর্ষণের ঘটনা সালিশে মীমাংসা করার কথা আমরা শুনেছি। এ ধরনের অপরাধের বিচার সালিশে করার সুযোগ নেই। ওই স্কুলছাত্রীর বাবা ছয়জনের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে থানায় মামলা করেছেন। আমরা রাতেই প্রধান অভিযুক্ত অনিককে গ্রেফতার করেছি। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত ওই ছাত্রীর মেডিকেল করানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ২৭ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি