পাচার ৯০ হাজার কোটির খোঁজে দুদক

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ২৯ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপির দেশের বাইরে পাচার করা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে আটজন মন্ত্রী, ছয়জন প্রতিমন্ত্রী এবং ১৫ জন এমপি রয়েছেন। তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান, রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানসহ আরো অনেকে।

জানতে চাইলে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এ প্রতিবেদককে বলেন, সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কোন কোন দেশে কার কী পরিমাণ সম্পদ পাচার হয়েছে সেগুলোর খোঁজে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে। দুদক সূত্র জানায়, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রযুক্তি খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি, এটুআই প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, হাইটেক পার্ক, আইটি পার্ক তৈরির নামে লোপাট করেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কণিকাও। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া আমেরিকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। নিজের অবৈধ আয়ের অর্থ বৈধ করতে স্ত্রীকে বানিয়েছেন উদ্যোক্তা। তার স্ত্রীর নামে সিংড়ায় রয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমি। ঢাকায় আছে কমপক্ষে ১৫টি ফ্ল্যাট। নামে-বেনামে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে পলক ও তার স্ত্রীর কণিকার নামে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর লন্ডনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে তার কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। সূত্র জানায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের দুবাইতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানকে ২০১৪ সালে তলব করে দুদক। অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী অপু উকিলের বিরুদ্ধেও রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। অবৈধ অর্থে ঢাকার উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের ১৫ নম্বরে দুই ইউনিটের সাততলা বাড়ির ১৪টি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। ঢাকার ধানমন্ডি ১১ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর বাড়িতে তিনটি ফ্ল্যাট, নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌরসভায় সাউদপাড়ায় রাজকীয় ব্যয়বহুল বাড়ি করেছেন।

হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার নিজ নামে, স্ত্রী ও পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। তার আত্মীয়স্বজনের নামে সিন্ডিকেট তৈরি করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। দেশে-বিদেশে তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, ভুয়া রোগী সাজিয়ে সরকারি অনুদানের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, করোনাকোলে প্রশিক্ষণ না করিয়ে বিল উত্তোলন, কাজ না করেই টিআর, কাবিখার মতো বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও মায়ের নামে ‘করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার মা ও শিশু বিশেষায়িত হাসপাতাল’ নির্মাণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। তার নিজ নামে, স্ত্রী ও পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। খুলনা-৬ আসনের সাবেক এমপি মো. আকতারুজ্জামান বাবু ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। একজন এমপি হয়েও স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের নামে কাজ করে দেশের আইন লঙ্ঘন করেছেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, ফ্ল্যাট ক্রয়সহ স্ত্রী ও সন্তানদের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের অর্জন করেছেন।

Scroll to Top