অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু খুললেও আতঙ্কে আছেন সিলেটের লোকজন। পুলিশ না থাকায় অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন বলে জানান অনেকে।
দিনের বেলা দোকানপাট ও অফিস-আদালত, ব্যাংক খুললেও দুপুরের পরই বেশিরভাগ বন্ধ হয়ে যায়। খোলা মেলেনি ব্যাংকের এটিএম বুথও। নগরবাসী জানান আর্মি টহল দিয়ে চলে যাওয়ার পর ঘটতে পারে হামলা লুটপাট। তাছাড়া অনেক পুরনো অপরাধীদের সোমবার রাতে রাস্তাঘাটে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন অনেকে, যারা একসময় ছিনতাই-চুরির সাথে জড়িত ছিল। পুলিশ থাকলে অভিযোগ করা যায় কিন্তু এখন থানা, ফাঁড়ি সব পুড়িয়ে ভাঙচুর করে দেওয়ায় অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। তাছাড়া আগেরদিন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসায় হামলা এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে। ফলে পুলিশ শূণ্য সিলেট নগরী। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। হামলার আশঙ্কায় রাত জেগে ব্যবসায়ীরা পাহারা দিয়েছেন বিভিন্ন বিপনী বিতান।
সরেজমিন মঙ্গলবার দেখা যায় ক্ষমতার পট পরিবর্তনে সকাল থেকেই খুলেছে স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়, ব্যাংক-অফিস, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও ছিল অনেক। তবে সবকিছু খুললেও কাজ ছিল ঢিলেঢালা। অফিসে লোকজন ছিল কম, যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কায় ভীত ছিলেন কর্মরতরা। লুটপাটের আশঙ্কায় ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো ছিল বন্ধ, ব্যাংক খুললেও অল্প সময় পর তা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক গ্রাহক জানান দুপুরের পর গিয়ে ব্যাংক খোলা পাননি। দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী জানান সকালে ব্যাংক খুলে দুপুরের দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক অফিস ছাড়াও দোকানপাটেরও একই অবস্থা ছিল। সকালে বেলা করে খুলে আবার দুপুরের পরই বন্ধ হয়ে যায় এসব দোকান। তবে ছোটাখাটো দোকান খুললেও নামদামি কোনো ব্রান্ডের দোকান বা ফ্যাসন হাউস খুলতে দেখা যায়নি। সোমবার স্বনাধন্য ফ্যাসন হাউস মাহা তে লুটপাটের পর এসব দোকানিরা আতঙ্কে আছেন। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত দেখা যায় গ্লাসঘেরা হাউসগুলোতে। কারণ ঢাকার মতো যেকোনো সময় গ্লাস ভেঙে এসব হাউস বা দোকানে লুটপাটের আশঙ্কা করছেন তারা। এসময় অনেক ব্যবসায়ী জানান রাত জেগে পাহারা দিয়েছি। দিনে দামি মালামাল সরানোর চেষ্টা করছি। এরকম পরিস্থিতিতে উৎসবের সময়ে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহায়তা মিলে। কিন্তু সোমবার বিকেল থেকে পুলিশহীন নগরী। এখন অভিযোগ কার কাছে করবো আর নিরাপত্তা প্রহরাই কার কাছে চাইবো। দুপুর বারোটার দিকে নগরীর আম্বরখানায় ইউনিমার্ট কমপ্লেক্সে দেখা যায় খ্যাতনামা ঘড়ির প্রতিষ্ঠান টাইম জোনের শো রুমে ঘড়ি বক্সে ঢুকাচ্ছেন কর্মরতরা। এসময় তারা জানান ঢাকায় শো রুমে লুটপাট হয়েছে। তাই আজ সকালে এসেই সব ঘড়ি সরাচ্ছেন। এগুলো তারা বক্সবন্দী করে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। দু চারদিন পর পরিস্থিতি শান্ত হলে হেড অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক শো রুম খোলা হবে। এসময় অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছিল। বিশেষ করে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভের বাসা এই মার্কেটের সাথেই। তাই যেকোনো সময় উত্তেজিত জনতার আক্রমনের আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন থানা ও পুলিশ স্টেশনে অগ্নি সংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় এসব এখন ভূতুড়ে ভবনের মতো পড়ে আছে। মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট জেলা পুলিশ কার্যালয় এবং পাশে এসএমপির কোতোয়ালি থানার বন্দর ফাঁড়িতে দেখা যায় সুনশান নীরবতা। এসময় দেখা যায় অনেক উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে, উঁকি দিয়ে এসব ধ্বংসস্তুপ দেখার চেষ্টা করছেন। তারা অনেকে এসব পুলিশের অতি উৎসাহী আচরণ ও সাধারণ জনতার উপর নির্যাতনের খেসারত উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও রাষ্ট্রীয় সম্পদের এমন ক্ষতি কাম্য নয় বলে জানান। তারা বলেন পুলিশের অপরাধের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা ঠিক না। এসময় সেনাবাহিনীর একটি টহল গাড়ি সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়।
জোবায়ের আহমদ নামে একজন জানান গতকাল উত্তেজিতরা যখন এগুলো পুড়ায় তখন তারা আটকাতে চেষ্টা করেন। অনেকে চেয়ার টেবিল এসব লুটপাট করতে চাইলে তারা হাত জোর করে বলেন এসব আমাদের সম্পদ, আমাদের টাকায় এসব করা হয়েছে, আবার নতুন করে করতে হলে আমাদের টাকাই যাবে। তাই এগুলো করো না। কিন্তু কাউকে কথা শুনানো যায়নি। পরে অবস্থা বেশি খারাপ হলে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এখান থেকে সরে যান। আজ ওদিক দিয়ে কাজে যাওয়ার পথে দেখতে এসেছেন কী ক্ষতি হলো।
এদিকে পুলিশ না থাকায় নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি ভেঙে পড়েছে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আগের মতো যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে নগরজুড়ে। বিভিন্ন সিএনজি স্ট্যান্ডে ছিল সারি সারি অটোরিকশা দাঁড়ানো। বাইরে থেকেও প্রচুর যানবাহন শহরে প্রবেশ করেছে। পুলিশ না থাকায় বন্দর- সোবাহানীঘাট সড়ক সহ অনেকে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে হকার এবং সবজিওয়ালারা বসেছেন। অধিক ও এলোপাতাড়ি যানবাহন ও হকার মিলে বিভিন্ন রাস্তায় তৈরি হয় মারাত্মক বিশৃঙ্খলা। দীর্ঘ যানজটে আটকে হাশফাঁস করেন অনেকে। বিকেলের দিকে কোনো কোনো জায়গায় মারাত্মক যানজট দেখা দেয়। ভুক্তোভোগীরা জানান দুইদিন থেকে পুলিশ নেই, লুটপাট হচ্ছে তাই সন্ধ্যার আগে বাসাবাড়িতে যেতে হবে। সেই তাড়ায় সবাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটছেন। সবার মধ্যেই এক নীরব আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সংগৃহিত