কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীসহ আরও প্রায় ১ হাজার ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত ৫১৭ জনকে।
এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে (১৭-২৩ জুলাই) সারা দেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গতকালও বিভিন্ন জেলায় নতুন করে মামলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গতকাল আরও ৩৮টি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে রাজধানীতে মোট মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১৯।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ৫১৭ জনকে গতকাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের অনেকে বিএনপি–জামায়াতের নেতা-কর্মী। এ নিয়ে গত তিন দিনে রাজধানীতে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে।
নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলের চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় সমবায়বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক সাইফুল আলমকে গতকাল গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের একাংশের যুগ্ম মহাসচিব মো. তারেক রহমান ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানা ও আশুলিয়া থানার কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক দিনের নাশকতার ঘটনায় সাভার ও আশুলিয়া থানায় করা ৬টি মামলায় ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম জানিয়েছেন, নাশকতার ঘটনায় মহানগরের ৮ থানার ২৮টি মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গতকাল তারাব পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আহাদসহ ৭৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ২৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় একটি ঘটনায় হামলা থেকে বাঁচতে চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর এলাকায় পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী গুরুতর আহত হন। তাঁরা যাতে পাইপ বেয়ে নামতে না পারেন, সে জন্য আরেকটি পক্ষ ইট ও পাথর ছুড়ে মেরেছিল। এ ঘটনায় গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ থানায় ছাত্রলীগের এক কর্মী একটি মামলা করেন। এই নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরে মামলার সংখ্যা দাঁড়াল ১৫।
পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় হওয়া এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সোমবার রাতে আরও ১০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই বিএনপির নেতা-কর্মী। চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় এ পর্যন্ত ৫৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।