divorced

ঘুষকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে তালাক দেন প্রকৌশলী, অতঃপর

মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প থেকে স্বামীর ঘুষ নেয়ায় প্রতিবাদ করেছেন খোদ স্ত্রী। ক্ষুব্ধ স্ত্রী দুর্নীতির তদন্তে দলিল দস্তাবেজ নিয়ে ঘুরছেন, প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। এমন অভিযোগ উঠেছে নীলফামারী জেলা গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত প্রকৌশলী।

আশরাফুজ্জামানের স্ত্রী রেজওয়ানা হাসনাত খুশবু অভিযোগ করেছেন, ঘুষকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। এর জেরেই তাকে দেয়া হয়েছে তালাক।

আশরাফুজ্জামানের বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার রামনগর গ্রামে। তার বাবা আব্দুল মান্নান গ্রাম্য চিকিৎসক। আশরাফ ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগদানের আগে তাদের পরিবার চলত বাবার সামান্য উপার্জনে। ছিল একটি মাত্র ঘর। তিনি চাকরি পেয়ে কয়েক বছরে করেছেন আলিশান বাড়ি। গ্রামে কিনেছেন জমি। বাড়িতেই গড়েছেন দুই বছরের ছেলের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দৃশ্যত এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম না থাকলেও অ্যাকাউন্টে চলে লাখ লাখ টাকার লেনদেন।

জানা গেছে, দিনাজপুর গণপূর্ত বিভাগ থেকে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান নীলফামারীতে যোগদান করেন। তাকে নীলফামারী সদর উপজেলা ও জলঢাকা উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যেই সদর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শেষ হয়। এর নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্য ১৩ কোটি ৫ লাখ টাকা হলেও, ব্যয় বাড়িয়ে ১৬ কোটি ৯২ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া জলঢাকা উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ চলমান।

রেজওয়ানা হাসনাত খুশবু অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে আশরাফুজ্জামান মোবাইল ফোনে মসজিদ নির্মাণকাজে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতেন। তিনি ঘুষের টাকার বদলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

খুশবু বলেন, ‘একদিন ফোনালাপ শেষ হলে আমি তাকে বলি যে, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখান থেকে তুমি ঘুষ নেবে? এতে তিনি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় গর্ভে সন্তান থাকায় প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করলেও কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু এর পর থেকে সামান্য ব্যাপারেও কথা কাটাকাটি হতো। এভাবে ধীরে ধীরে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।’

আশরাফুজ্জামানের বাড়ির এক পাশে মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্সের নামে করা হয়েছে একটি গুদাম ঘর। ২০২২ সালে তার বাবা আব্দুল মান্নানের নামে মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্সের ট্রেড লাইসেন্স নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ডিপোজিট এবং ৩৩ লাখ ৪৬ টাকা উইথড্র করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ৯ ও ১০ জানুয়ারি ৯ লাখ ও ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে এফডিআর ক্লোজ বাবদ ১৯ লাখ ৯৭ টাকা জমা হয়েছে।

খুশবু অভিযোগ করে বলেন, আশরাফুজ্জামানের নামে সোনালী, রূপালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। তার বাবা-মায়ের নামেও আছে একাধিক অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্টে সদর উপজেলার দুটি মসজিদের কাজ থেকে ২৫ লাখ এবং জলঢাকার একটি মসজিদ প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে নেয়া ২০ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নীলফামারী চৌরঙ্গী থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত সড়ক এবং জমি অধিগ্রহণের সময় ৮৫ লাখ টাকা ঘুষ নেন তিনি। এসব টাকা তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে আছে। কিছু টাকা দিয়ে বাড়ি এবং গ্রামে জমি কিনেছেন।

অভিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান দাবি করেন, অভিযোগকারী তার সাবেক স্ত্রী। বিপদে ফেলার জন্যই সত্য গোপন করে গণমাধ্যমে এমন খবর দিচ্ছেন।

আশরাফুজ্জামানের ঘুষকাণ্ড প্রসঙ্গে গণপূর্তের মডেল মসজিদের প্রকল্প পরিচালক নজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চাকরিবিধি অনুযায়ী এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Scroll to Top