বিদেশে পড়াশোনা করে দেশে এসে নকল সার্টিফিকেট বিক্রি করছেন

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নকল সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।

বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয় এই চক্রের মূল হোতা প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় বিভিন্ন পর্যায়ের অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট, মার্কশিট এবং নগদ টাকা।

এরপর শুক্রবার (৫ মে) সকালে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লালবাগ থানার বড়ঘাট মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী এবং দারুল এহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপুকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি বলছে, চক্রের হোতা প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান। তিনি বিদেশে উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন। দেশে ফিরে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন নকল সার্টিফিকেট তৈরিতে। জিয়া মূলত একজন সহযোগীকে দিয়ে এই কাজ করাতেন। তার নাম ইয়াসিন। আর তাকে এই কাজে সহায়তা করতেন দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ। তারা এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের কাছে এসব জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন।

গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে এই সার্টিফিকেট তৈরি হতো। অর্থের বিনিময়ে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়র সার্টিফিকেট তৈরি করতেন চক্রের সদস্যরা। অভিযুক্তরা আগেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও তারা ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরির কাজ শুরু করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা এবং এই চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলন, রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে গ্রেফতার করা হয় প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন পর্যায়ের একাডেমিক অনেক সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ইনভেলপ ও নগদ টাকা।

মশিউর রহমান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে নীরবে বিপুল টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন চলমান এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন এবং পোস্ট গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিলেন তারা। পাশাপাশি বিভিন্ন বোর্ডের সেকেন্ডারি (এসএসসি) ও হায়ার সেকেন্ডারি (এইচএসসি) পরীক্ষার মার্কশিট ও সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিলেন।

ডিসি মশিউর রহমান আরও বলেন, “অনলাইন বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করা হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারি। তারা সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ট্রান্সক্রিপ্ট ও টেস্টিমোনিয়াল বানিয়ে দেন। যাতে যারা সার্টিফিকেট কেনেন তারা দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন।”

এসব জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিটগুলো বোর্ড অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা মূল কাগজ দিয়েই তৈরি করা হতো। এমনকি সেগুলোকে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। যেন পরবর্তীতে অনলাইন ভেরিফিকেশনে সেগুলোর তথ্য পাওয়া যায়।

প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যে অনেকদিন ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অপরাধীদের শনাক্তের পর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে লালবাগ থানার বড়ঘাট মসজিদ এলাকার কাশ্মিরি গলির একটি বাসায় শুক্রবার সকালে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ইয়াসিন আলী ও দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপুকে গ্রেফতার করা হয়।

নামিদামি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বানানো এ ধরনের সার্টিফিকেট কয়েক হাজার জনকে বিক্রি করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানিয়েছেন জিয়া।

গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের এই উপপুলিশ কমিশনার আরও বলেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের বেশ কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তির নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা অনলাইন ভেরিফিকেশন করে সার্টিফিকেট বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। লাখ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এসব প্রতারকের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।