লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মো. জুয়েল নামের এক যুবককে সিঙ্গাপুর নেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে তার ফুফু আলেয়া বেগম চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সিঙ্গাপুরের কথা বলে জুয়েলের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা-চট্টগ্রামের বিমান টিকিট। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নেমে জুয়েল প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এদিকে ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে আলেয়া বেগম, তার ছেলে আওলাদ হোসেনসহ সংঘবদ্ধ স্বজনরা।
ভুক্তভোগী জুয়েলের বাবা শহীজল মাঝি বাদী হয়ে ৯ মে লক্ষ্মীপুর জজ আদালতে আলেয়া ও তার ছেলে আওলাদসহ ছয়জনের নামে মামলা দায়ের করেন। গত শনিবার (১৪ মে) বাদীর আইনজীবী মুনসুর আহমেদ দুলাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আইনজীবী মুনসুর আহমেদ দুলাল জানিয়েছেন, মামলাটি আদালতের বিচারক আমলে নিয়েছেন। আদালত মামলটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী কার্যালয়কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত আলেয়া ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার কুদবা ইউনিয়নের কুদবা গ্রামের পল্লী পশু চিকিৎসক বশির আহমেদের স্ত্রী। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন আওলাদের স্ত্রী আয়েশা আক্তার, শ্যালক সানী, দুলাভাই শামীম হোসেনসহ চারজন। মামলার বাদী শহীজল মাঝি কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়নের বটগাছতলা এলাকার বাসিন্দা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৩০ বছর পর আলেয়া ছয় মাস আগে চরমার্টিনে ভাই শহীজলের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বাবা মারা যাওয়ার খবর পেয়েও তখন আসেননি। আলেয়া যাওয়ার কিছুদিন পর তার ছেলে আওলাদ বেড়াতে আসেন। তখন শহীজল জানতে পারেন, আওলাদ পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে তালাক দেন। এতে বোনের আবদারে শহীজল পাত্রী দেখে লক্ষ্মীপুরেই তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করান। একপর্যায়ে আলেয়া জানান, আওলাদের প্রথম শ্বশুর তাকে সিঙ্গাপুরের একটি ভিসা দিয়েছেন। দুই-তিন দিনের মধ্যেই তাকে সিঙ্গাপুর যেতে হবে। তা না হলে ভিসা বাদ হয়ে যাবে। এ জন্য দ্বিতীয় শ্বশুরের কাছ থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে দিতে হবে। শ্বশুরপক্ষ থেকে টাকা নেওয়ার পরদিনই বিদায় নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে আওলাদ মামার বাড়ি থেকে বের হন। এর এক দিন পরই অনলাইনের একটি নম্বর দিয়ে শহীজলদের ফোনে কল দিয়ে আওলাদ সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন বলে জানান। এ সময় মামাতো ভাই জুয়েলকেও সিঙ্গাপুর নেওয়ার জন্য বলেন। এতে আলেয়া তার ভাই শহীজলের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে এটি ৯ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। এর মধ্যে শহীজলকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে বলেন। বাকি টাকা আলেয়া নিজে দেবেন বলে জানান। অনলাইন থেকে বিদেশীয় ফোন নম্বরের মতো নম্বর দিয়ে প্রায়ই শহীজলের কাছে কল দেন আওলাদ। এতে শহীজল মাঝি এনজিও এবং তিন মেয়ে জামাইয়ের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চার লাখ টাকা সংগ্রহ করেন।
অন্যদিকে ২৯ এপ্রিল বাড়ি থেকে টাকাসহ ছেলে-বোনকে নিয়ে শহীজল রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সেখানে আলেয়ার কথায় সানি নামের একজনকে চার লাখ টাকা দেন। টাকা পেয়ে একটি টিকিট জুয়েলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত বিমানে গিয়ে উঠতে বলেন। বিমানবন্দরের দুটি গেট অতিক্রম করে জুয়েল তার ফুফাতো ভাই আওলাদকে দেখতে পান। এতে তাৎক্ষণিক জুয়েল থমকে যান। এরপর আওলাদ তাকে ভয় দেখিয়ে বিমানে উঠতে বলেন। একই সঙ্গে আওলাদও বিমানে ওঠেন। পরে বিমানটি চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে নামে। সেখানে শামীম নামের একজন তাদেরকে নিয়ে একটি হোটেলে ওঠেন। একপর্যায়ে তারা জুয়েলকে অস্ত্র দেখিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে তাদের কথামতো চলার নির্দেশ দেন।
মো. জুয়েল বলেন, \’অস্ত্র ঠেকিয়ে আওলাদ ও শামীম আমার বাবার সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দেয়। এ সময় সিঙ্গাপুরের পরিচয়পত্রের জন্য ফুফুর কাছে আরো দেড় লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলতে বলে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্য এক ব্যক্তির ফোন থেকে বাবাকে কল করে আমি সঠিক ঘটনাটি জানাই। এর পরই আমাকে বাসযোগে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকায় এনে তারা পালিয়ে যায়। \’
শহীজলের ছোট ভাই মাহে আলম বলেন, \’ঋণ নিয়ে ছেলের সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য শহীজুল বোনের হাতে চার লাখ টাকা তুলে দেয়। এই ঋণ পরিশোধের চিন্তায় ও পাওনাদারদের ভয়ে আমার ভাই দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অভিযুক্তদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। \’
শহীজলের প্রতিবেশী আবদুল হালিম জানান, প্রতারণার ফাঁদে পড়ে শহীজল নিঃস্ব হওয়ার পথে। ধার নেওয়ার টাকার জন্য এক মেয়েকে তার স্বামী বাবার (শহীজল) বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অন্য দুই মেয়ে জামাইও টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এ ঘটনায় বক্তব্য জানতে আলেয়া বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।