বিনিয়োগ করলেই মুনাফা! ধর্মের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করত একটি প্রতারক চক্র। অনেকেই বুঝতে না পেরে সেখানে বিনিয়োগ করেন নিজেদের সারাজীবনের কষ্টার্জিত টাকা। এভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় নরসিংদীর শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস নামে কোম্পানিটি।
কোম্পানিটির মূল হোতাসহ পাঁচজন র্যাবের হাতে গ্রেফতার হলে তাদের সম্পর্কে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানায় এলিট ফোর্সটি।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে আজ রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেফতারদের সম্পর্কে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে গতকাল শনিবার রাতে তাদের নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা শাহ আলম (৫০), দেলোয়ার হোসেন শিকদার (৫২), কাজী মানে উল্লাহ (৪৪), সুমন মোল্লাহ (৩৩) ও আ. হান্নান মোল্লাহ (৩০)।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, চক্রটির ফাঁদে পড়ে নরসিংদী জেলার প্রায় ৫-৬ হাজার সাধারণ পেশাজীবী মানুষ অতিরিক্ত লাভের আশায় শত শত কোটি টাকা অর্থ বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। বেশিরভাগ মানুষ তাদের সারাজীবনের কষ্টার্জিত জমানো অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। একদিকে করোনা মহামারিতে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা অপরদিকে বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটুকু হারিয়ে পথে বসেছে চক্রটির খপ্পরে পরা নরসিংদীর শত শত মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী মানুষ তাদের গচ্ছিত টাকা ফিরে পাবার আশায় স্থানীয় সমবায় অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর জেলা সমবায় অধিদফতর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু প্রতারকরা লাপাত্তা হয়ে যায়।
খন্দকার আল মঈন আরও জানান, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রতারক চক্রটি তাদের প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় গুটিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
২০১০ সালে নরসিংদী সদরের চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকায় শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানির নামে শরিয়াভিত্তিক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে প্রতারক চক্রটি। ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সুকৌশলে সুদমুক্ত ব্যবসায় প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কাছ হতে আমানত সংগ্রহ করে তারা। সুদমুক্ত জীবনযাপন ছিল তাদের প্রতিষ্ঠানের লোক দেখানো মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রের অন্যতম হোতা শাহ আলম নিজে কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে চারটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং ২৪ জন জনবলের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ও অতিরিক্ত ২০ জন পরিচালক নিয়োগ দেন। আত্মীয় বা পরিচিতদের পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দেন। পরে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন থানার জনবহুল ও ব্যবসায়িক এলাকায় জাঁকজমকপূর্ণ শাখা অফিস খোলেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো; শাহ সুলতান এমসিএস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ, স্বদেশ টেক্সটাইল লিঃ, শাহ সুলতান টেক্সটাইল লিঃ ও শাহ সুলতান প্রপার্টিজ লিঃ।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র্যাবকে জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য তাদের প্রায় ৩ শতাধিক কর্মী ছিল, যাদের কোনো বেতন দেওয়া হতো না। গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া বিনিয়োগের একটি অংশ দেওয়া হতো তাদের।
খন্দকার আল মঈন আরও জানান, করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন অজুহাতে গচ্ছিত টাকা ফেরত না দিতে গড়িমসি শুরু করে তারা। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওমর ফারুক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদ রানা গ্রাহকদের লগ্নিকৃত টাকা দিয়ে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে ৫-৬ একর জমি নিজেদের নামে ক্রয় করেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নামে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ একর জমি রয়েছে। টাকা ফেরতের জন্য গ্রাহকদের ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা মঈন।