কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল হোসেন স্বীকার করেছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ। কারা তাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন সেটা জানার জন্য ইকবালকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ ঘটনার অনুসন্ধান করছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এখন তাদের গ্রেফতারের কার্যক্রম চলছে। এদের মধ্যে অনেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে আছেন।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় পরিকল্পনাকারী ও জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’
এদিকে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সময় ইটের আঘাতে আহত দিলীপ কুমার দাস বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। গত ১৩ অক্টোবর তিনি নগরীর মনোহরপুর এলাকার রাজ রাজেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দিরের ফটক বন্ধ করতে গিয়ে ইটের আঘাতে আহত হন। দিলীপের বাসা নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানাসংলগ্ন পানপট্টি এলাকায়। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা বিষু লাল দাসের ছেলে।
নিহত দিলীপ কুমার দাসের ভাতিজা শান্ত কুমার দাস জানান, দুই দফা অস্ত্রোপচারের পরও তার চাচাকে বাঁচানো যায়নি। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
জানা যায়, দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ের অস্থায়ী একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে অবমাননা ও এ নিয়ে সৃষ্ট সহিংস ঘটনায় জড়িত ইকবাল হোসেনকে (৩৫) কক্সবাজার জেলা সদরের সুগন্ধা বিচ এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার ভোরে কুমিল্লা পুলিশের একটি দল কক্সবাজার পুলিশ থেকে তাকে বুঝে নেয়। কড়া পাহারায় তাকে শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটের দিকে কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে আসা হয়। সেখানে শুধু ফটোসেশনের জন্য তাকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়।
এ সময় জেলা পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের ঘটনায় সিসি টিভির ফুটেজে ধরা পড়া ব্যক্তিই কক্সবাজারে আটক হওয়া ইকবাল হোসেন বলে নিশ্চিত করেন। দুপুর থেকেই পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। এ ঘটনার পেছনের কুশীলব কারা এবং কেন-ই-বা কীভাবে ইকবালকে দিয়ে পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা হয়, তাকে কীভাবে কক্সবাজার যেতে ও পালিয়ে থাকতে কে বা কারা সহায়তা করেছে জিজ্ঞাসাবাদে এসব বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কুমিল্লা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার দিনভর ইকবাল কক্সবাজারের সুগন্ধা বিচে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে এলোমেলোভাবে ঘুরাফেরা করে। নোয়াখালী থেকে সুগন্ধা বিচে বেড়াতে তিন যুবকের সঙ্গে এসময় কথা বার্তার সময় ইকবালের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে ইকবাল তার পালিয়ে থাকার সমস্যার কথা তাদেরকে জানায়। বিষয়টি জেনে তারা রাতের দিকে কক্সবাজার পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে। খবর পেয়ে রাতেই কক্সবাজার পৌঁছে কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল। কক্সবাজার পুলিশ থেকে ইকবালকে বুঝে নিয়ে মাথায় হেলমেট পরিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে একটি কালো রংয়ের একটি মাইক্রোবাসে করে সেখান থেকে কড়া পুলিশ পাহারায় শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে তাকে কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে আসা হয়।