শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীকে বেড়াতে নিয়ে এসে হত্যার পর মৃতদেহ গুম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশালে গৌরনদী উপজেলায়। এ অভিযোগ উঠেছে বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের এক পরিছন্নতা কর্মীর বিরুদ্ধে। পুলিশের হাতে আটকের পর পরিছন্নতা কর্মী সাকিব হোসেন (২৪) তার স্ত্রী নাজনীন আক্তারকে (১৯) হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
সাকিব পুলিশকে জানিয়েছেন, শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের তার বাবার ঘরের পাশে সেফটি ট্যাংকিতে স্ত্রী নাজনীন আক্তারের মৃতদেহ গুম করেছেন।
সাকিব হোসেনের কথার সূত্র ধরে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সেফটি ট্যাংকিসহ আশপাশের এলাকায় তল্লাশি শুরু করেছে বগুড়া সদর থানা পুলিশের একটি দল। তাদের তল্লাশি কাজে সহায়তা করছে গৌরনদী থানা পুলিশ। তবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নাজনীন আক্তরের মৃতদেহের সন্ধান মেলেনি।
তবে সেফটি ট্যাংকির ভেতর থেকে নাজনীন আক্তারের ওড়না ও শরীরের চামড়ার কিছু অংশ পাওয়া গেছে। নাজনীন আক্তার বগুড়া সদরের সাবগ্রাম (উত্তরপাড়া) এলাকার মো. আব্দুল লতিফের মেয়ে। আটক সাকিব হোসেন গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের আব্দুল করিম আকন্দের ছেলে। আড়াই বছর আগে বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসে পরিছন্নতা কর্মী হিসেবে চাকরি পান সাকিব হোসেন। সেই সুবাদে তিনি বগুড়ায় থাকতেন।
পুলিশ জানায়, গত ২৪ মে থেকে নাজনীন আক্তার নিখোঁজ ছিলেন। এই ঘটনায় গত ২৬ মে তার বাবা আব্দুল লতিফ বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ গতকাল সোমবার সাকিব হোসেনকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে সাকিবের সঙ্গে নাজনীন আক্তারের বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর নাজনীন তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন।
সাকিব গত ২৪ মে স্ত্রী নাজনীকে ফোন দিয়ে বলেন, তার (সাকিব) বাবা খুবই অসুস্থ। অসুস্থ বাবাকে দেখতে নাজনীনকে তার গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে যেতে হবে। সাকিব নাজনীনকে গোদাপাড়া চারমাথা বাসস্ট্যান্ডে দ্রুত আসতে বলেন। এরপর তারা বাসে করে গৌরনদীর উদ্দেশে রওনা হন। নাজনীনের সঙ্গে আর তার বাবা-মায়ের যোগযোগ হয়নি। পরবর্তীতে বাবা-মা নাজনীন ও সাকিবের মোবাইলে কল দিলে দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনা উল্লেখ করে আব্দুল লতিফ থানায় জিডি করেন।
এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শকের (এসআই) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, নাজনীন নিখোঁজের বিষয়ে খোঁজ নিতে গতকাল সোমবার সাকিবকে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়। সাকিব এ সময় মিথ্যা কথা বলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।
এ সময় তাকে আটক করে থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি পুলিশকে বলেন, বাবার অসুস্থতার মিথ্যা কথা বলে গত ২৪ মে নাজনীনকে নিয়ে তিনি বাবার বাড়ি গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে আসেন। তার বাবা আব্দুল করিম পেশায় ভ্যানচালক। আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। যদিও এসব কথা গোপন করে সাকিব নিজেদের অর্থিক অবস্থা খুবই ভালো পরিচয়ে নাজনীনকে বিয়ে করেছিলেন। সাকিবের কাছে এসব কথা গোপন করার কারণ জানতে চান নাজনীন।
এসব নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া বেধে যায়। একপর্যায়ে রাগে নাজনীন সাকিবকে ‘ভিক্ষুকের ছেলে’ বলে গালি দেন। সাকিব এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীনের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর বাবা-মায়ের সহায়তায় ঘরের পেছনে থাকা সেফটি ট্যাংকিতে স্ত্রী নাজনীন আক্তারের মৃতদেহ গুম করে বগুড়া ফিরে গিয়ে কর্মস্থলে যোগ দেন।
এ বিষয়ে গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানান, সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়া সদর থানা পুলিশের একটি দল গৌরনদী আসেন। এরপর গৌরনদী থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তারা নাজনীনের মৃতদেহ উদ্ধারে বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে যান। আগেই এই খবর পেয়ে সাকিবের বাবা-মা সেখান থেকে পালিয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে প্রথমে সেফটি ট্যাংকি পরিস্কার করে তার মধ্যে তল্লাশি করা হয়। সেফটি ট্যাংকির ভেতর থেকে নাজনীনের ওড়না ও শরীরের চামড়ার কিছু অংশ পাওয়া গেছে। কিন্তু মৃতদেহ সেখানে পাওয়া যায়নি। বাড়ির আশেপাশে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।