এলাকায় দানবীর, ঢাকায় ছিনতাইকারী ও ভয়ংকর চোর!

শানু হাওলাদার (৫৫) পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এলাকার সবাই তাকে দানশীল ব্যক্তি হিসেবে জানলেও রাজধানীতে পুলিশের খাতায় তিনি একজন ছিনতাইকারী ও ভয়ংকর চোর। কারণ ঢাকায় তার নামে রয়েছে ডজন খানেকের বেশি মামলা। একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে করেছেন কারাবাসও।

গত শুক্রবার বাউফল থানা পুলিশের সহায়তায় ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) একটি টিম ছিনতাই মামলায় গ্রেফতার করে তাকে। এরপরই আলোচনায় আসেন শানু হাওলাদার।

জানা গেছে, শানু হাওলাদার ওরফে শানু মেম্বার সামাজিকভাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দানশীল ব্যক্তি হিসেবে নিজ গ্রামে পরিচিতি পেয়েছেন। এ সুযোগে তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন নিজ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদ। এমনকি সদ্য ঘোষিত বাউফল উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটিতেও রয়েছে তার নাম।

স্থানীয়রা জানান, শানু মেম্বার ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কিশোর বয়সে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ঢাকা গিয়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কেয়ারটেকারের (তদারকির) কাজ নেন। অনেক বছর পর হঠাৎ একদিন এলাকায় এসে তিনি নিজেকে ঢাকায় বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ও বড় ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করেন। এলাকার দরিদ্র-হত দরিদ্রদের মধ্যে নগদ টাকাসহ চাল, ডাল, কাপড়চোপড় দান করা শুরু করেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা নেছার উদ্দিন বলেন, শানু মেম্বার এলাকার মানুষের কাছে একজন বটবৃক্ষের মতো। তার কাছে কোনো অসহায় ব্যক্তি সাহায্যের জন্য গেলে তিনি সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। অনেক বছর ধরে এলাকার দরিদ্র-হত দরিদ্রদের সাহায্য করার কারণে দানবীর হিসিবে খ্যাতি রয়েছে তার।

কাছিপাড়া ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক স্থানীয় বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন বলেন, \”শানু মেম্বার ঢাকায় কি করেন আমরা কিছুই জানতাম না। তিনি (শানু)এলাকায় একজন সৎ ইউপি সদস্য হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে সরকারি কোনো সহায়তা চুরি করার অভিযোগ নেই। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ঈদ উপহার হিসেবে জনপ্রতি সারে চারশ টাকার নির্দিষ্ট তালিকার চেয়ে অতিরিক্ত ব্যক্তিদের দান করেন। এলাকার দরিদ্র নারী পুরুষের কাছে প্রকৃত জনসেবক হিসেবে তিনি জনপ্রিয়।\”

অন্যদিকে দিকে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, গত বৃহস্পতিবার ঢাকার উত্তরার পশ্চিম থানায় ছিনতাই মামলায় শানু মেম্বারের বিরুদ্ধে সমন জারি হয়। ওই মামলায় ডিএমপির একটি দল বাউফল থানা পুলিশের সাহায্যে শানু মেম্বারকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ আরও জানায়, ঢাকার বিভিন্ন থানায় শানু মেম্বারের বিরুদ্ধে একধিক মামলা রয়েছে। এ সকল মামলার মধ্যে অধিকাংশ গাড়ি ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। তার রয়েছে একটি বাহিনী। বাহিনীর সদস্যরা সিএনজি, ট্যাক্সিক্যাবসহ নানা গাড়িতে যাত্রী বেশে উঠে চালককে অজ্ঞান করে গাড়ি ছিনতাই করে। তাদের রয়েছে ঢাকার অভিজাত এলাকার বিভিন্ন ফ্ল্যাটের দারোয়ান ও কেয়াটেকারদের সাথে সখ্যতা। এই সখ্যতার সুবাধে শানু বাহিনীর চলে নানা অপকর্ম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাউফল সদর ইউনিয়ন পরিষদের চোরম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পরিষদের একজন সদস্য যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন। তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আইন তার নিজ গতিতে চলবে।

Scroll to Top