মধ্যরাতে পলায়ন: প্রেমিককে বেঁধে প্রেমিকাকে গণধর্ষণ

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গিধাউষা এলাকায় প্রেমিককে গাছের সঙ্গে বেঁধে প্রেমিকাকে (১৫) গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও জড়িত কাউকে এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ। গত ১১ অক্টোবর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের গিধাউষা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে ঘটনার পর থেকেই প্রেমিক খায়রুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা, এবং খায়রুলের বন্ধু সোহেল মিয়ার কোনও খোঁজ মিলছে না বলে স্বজনরা জানিয়েছে। একই সঙ্গে ধর্ষকরাও গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে স্থানীয়দের দাবি, লোকলজ্জা ও হুমকির ভয়ে তারা তিনজনই লোকচক্ষুর অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে।স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের পেঁচাঙ্গিয়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে খায়রুল ইসলাম ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মনাকান্দা গ্রামের রশিদ মিয়ার কন্যার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

জানা যায়, গত ১১ অক্টোবর সহনাটি এলাকায় খালার বাড়িতে বেরাতে আসেন ওই প্রেমিকা। ওই দিন রাতেই ওই মেয়েটি তার প্রেমিক খায়রুলের সঙ্গে দেখা করতে গোপনে ঘর থেকে বের হয়। ওই রাতে খায়রুল একই এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে রিকশাচালক সোহেল মিয়াকে নিয়ে দেখা করতে আসে প্রেমিকার সঙ্গে। এসময় তাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে কিছু বখাটে মিলে ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে সোহেল মিয়ার স্ত্রী লিপা আক্তার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমি আমার স্বামীর কোনও খোঁজ পাচ্ছি না।’ লিপা আক্তার বলেন, ‘ওই প্রেমিক ও আমার স্বামীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ধর্ষণের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তবে পুলিশ এসে বাড়িতে খোঁজখবর নিয়ে গেছে। আমি সোহেলের সন্তানের মা হতে যাচ্ছি। আপনারা আমার স্বামীকে এনে দিন।’

ঘটনার বিরবণে জানা গেছে, ওই রাতে প্রেমিকা ও বন্ধু সোহেলকে নিয়ে সহনাটি যাওয়ার পথে গিধাউষা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দুর্বৃত্তরা তাদের পথরোধ করে। এসময় প্রেমিক খায়রুল নীরব থাকলেও সোহেল নিজে ওই মেয়েকে নিজের স্ত্রী পরিচয় দেন। কিন্তু তাতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা। তাদের মারধরে এক পর্যায়ে খায়রুল ও সোহেলকে গাছের সঙ্গে বেঁধে তাদের সামনেই ওই তরুণীকে রাতভর গণধর্ষণ করে। এ সময় তাদের বাঁচাতে সোহেলের এক বন্ধু গিধাউষা গ্রামের ব্যবসায়ী মঙ্গলা মিয়ার ছেলে তপন মিয়াকে ডেকে আনলে তিনিও তাদের রক্ষা না করে উল্টো মেয়েটিকে ধর্ষণে লিপ্ত হয়।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার চার দিন পর গত ১৫ অক্টোবর গিধাউষা গ্রামে এ নিয়ে সালিশ বসলেও অভিযুক্তদের কেউ সেখানে আসেনি। পরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তপন মিয়া ও একই অভিযোগে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের ছেলে পলিশ উদ্দিনের দোকানে তালা দেন।

এলাকাবাসী জানায়, পুলিশ তরুণীসহ যুবকদের উদ্ধার করে ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই একজনকে আটক করলেই মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

সোহেলের মা রওশন আরা বলেন, ‘পেঁচাঙ্গিয়া গ্রামের খায়রুল ওই দিন রাতে সোহেলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরের দিন বৃহস্পতিবার খায়রুল বাড়িতে এসে আমাকে বলে, ‘আপনার ছেলেকে মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় গিধাউষা গ্রামে ফেলে রেখেছে।’

খায়রুল সোহেলের মাকে তখন বলে আসেন, সোহেল আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছে। তার পরিণতি খুব খারাপ হবে। পরে সোহেলের বাবা গিধাউষা গ্রামে গিয়ে ছেলের কোনও খোঁজ পাননি। তবে সোহেলের মোবাইল ফোনটা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ঘটনায় এখনও সোহেল কিংবা খায়রুলের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনও মামলা বা জিডি করা হয়নি।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বুধবার (১৮ অক্টোবর) সকালে কথা হয় সহনাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘খায়রুলের সঙ্গে ওই তরুণী দীর্ঘদিন ধরে প্রেম করতো। ওই তরুণীর খালার বাড়ি আমাদের গ্রামেই। তরুণীর খালার পরিবারের লোকজনও আজ আমার কাছে এসেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই পরিবারের লোকজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছিল। নিখোঁজ তরুণীকে খুঁজে বের করতে চেষ্টা চলছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরীপুর মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি আইনজীবী আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, ‘নির্যাতিতরা নিখোঁজের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’ তবে এলাকাবাসী মনে করছে, ঘটনা যাই হোক- পুলিশের উচিত দ্রুত নির্যাতনের শিকার তরুণীসহ সবাইকে উদ্ধার করে প্রকৃত সত্য ঘটনা উন্মোচন করা।

উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি রাবেয়া ইসলাম ডলি বলেন, ‘ভিকটিম উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ওই রাতে আসলে কি ঘটে ছিল তা সঠিক বলা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘ঘটনার ৭ দিন পরও পুলিশ এখনও নিখোঁজ ওই তিনজনকে উদ্ধার করতে পারেনি। বিষয়টি খুব দুঃখজনক। আর গ্রামে যেহেতু নির্যাতনের বিষয়টা বলাবলি হচ্ছে সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের উচিত তদন্ত করে প্রকৃত সত্যটা প্রকাশ করা।’

গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) দেলোয়ার আহম্মদ জানান, ধর্ষণের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও পরিবারের কেউ অভিযোগ করেননি। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ নির্যাতিতদের উদ্ধার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

তবে তাদের উদ্ধার না করা পর্যন্ত বিষয়টি দলবদ্ধ গণধর্ষণ নাকি অন্য কিছু সেটা সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। ঘটনা তদন্ত করে পরে বিস্তারিত বলা হবে বলেও জানান ওসি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, ১৮ অক্টোবর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি