বেড়েই চলেছে নকল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে প্রতারণার ঘটনা। এই ভুয়া ডিবি পুলিশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধকর্মে। নকল গোয়েন্দা পুলিশের গায়ে ডিবি লেখা জ্যাকেট, হাতে ওয়াকিটকি, হাতকড়া সহ আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝাও মুশকিল তারা আসল, না নকল!
টাকা ছিনতাই বা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য গাড়ি নিয়ে ব্যাংকের সামনে অবস্থান করে তারা, গায়ে ডিবি লেখা জ্যাকেট, হাতে ওয়াকিটকি, হাতকড়া সহ আগ্নেয়াস্ত্র সাথে সাদা পোশাকে আরও কয়েকজন সদস্য। এরপর টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে তড়িৎ গতিতে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। প্রথম অবস্থায় যে কেউই দেখলে মনে করবে ওরা ডিবি সদস্য। কিন্তু না, ওরা আসলে ভুয়া ডিবি। টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে এরপর গাড়িতে তুলে টাকা-পয়সা নিয়ে রাস্তায় ফেলে দিতেন তারা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বেশকিছু অভিযোগের পর এই চক্রের সন্ধানে নামে। গত সোমবার গভীর রাতে যাত্রাবাড়ী থেকে এই চক্রের মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি দেশীয় পিস্তল, এক রাউন্ড কার্তুজ, একটি ডিবি লেখা জ্যাকেট এবং ওয়্যারলেস সেট উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- বারেক (৩৭), আবুল কাশেম ওরফে জীবন ব্যাপারী (৫৬) ও স্বপন আকন্দ (৪০)। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পরিচয়ে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র ডাকাতি করছে মর্মে তথ্য পায় গোয়েন্দা বিভাগ। এবং এই তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, প্রাইভেটকারযোগে ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশ এলাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যাংক কিংবা প্রতিষ্ঠানে আগত টাকা বহনকারী কিংবা টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করত। তারপর টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কিংবা মাদক দিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে পালিয়ে যেত। এই ঘটনায় তাদের নামে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে যাত্রাবাড়ী থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির ওয়ারী জোনের ডিসি, আব্দুল আহাদ জানান, এই চক্রে আরও বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বারেকের নামে বিভিন্ন থানায় আটটি, আবুল কাশেম ওরফে জীবনের বিরুদ্ধে সাতটি এবং স্বপন আকন্দের বিরুদ্ধে নয়টি মামলার তথ্য মিলেছে।