বরগুনায় শ্রেণিকক্ষে সহকারী শিক্ষিকাকে গণধর্ষণের ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত সুমন বিশ্বাস (৩৫)। বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের এই সুমন এলাকায় ‘রামদা সুমন’ নামে পরিচিত। স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের ছত্রছায়ায় এলাকায় গড়ে তুলেছেন ১০-১২ জনের একটি রামদা বাহিনী। রামদা সুমনের নেতৃত্বে এলাকায় মাদক বিক্রিসহ চলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন সময় এলাকায় প্রকাশ্যে মহড়া দেন সুমনের নেতৃত্বে এই রামদা বাহিনীর সদস্যরা। তাই কদমতলা ও এর আশপাশের গ্রামে এক আতঙ্কের নাম ‘রামদা সুমন বাহিনী’।
জানা যায়, কদমতলা এলাকার হিরণ বিশ্বাসের ছেলে সুমন বিশ্বাস। গত ইউপি নির্বাচনের আগে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়ানোয় এলাকায় তার অনুসারী গড়ে ওঠে এবং ছোটখাটো অপরাধপ্রবণতা চালাতে থাকে। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে তার চাচাত ভাই মন্টু বিশ্বাস ইউপি সদস্য প্রার্থী হলে তার পক্ষে প্রচারণায় নামে সুমন। ওই নির্বাচনে ভাইয়ের পক্ষে প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আলোচনায় আসে সুমন। নির্বাচনে মন্টু বিশ্বাস জয়লাভ করার পর সুমনকে মোটরসাইকেল উপহার দেয়া হয়। এর পরপরই বেপরোয়া হয়ে ওঠে সুমন। অনুসারীদের নিয়ে গড়ে তোলে ‘বাহিনী। মাদক বিক্রির পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো, বাবার সামনে ছেলেকে নির্যাতন, ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকি, একের পর এক নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে সুমন।
চলতি বছরের জুন মাসের শেষের দিকে শতাধিক মানুষের সামনে হোসনাবাদ ইউনিয়নের টানা পাঁচবারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাকসুদুর রহমান ফোরকানের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও দিয়েছিল এই সুমন। মাস দুই আগে বেতাগী উপজেলার জলিসারহাটে একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালে বাবার সামনে ইমন নামের এক যুববকে নির্মম নির্যাতন করেছিল সুমন ও তার সহযোগীরা। চোখের সামনে ছেলের প্রতি নির্মম নির্যাতন দেখে ঘটনাস্থলেই স্ট্রোক করে মারা যান নির্যাতিত ওই যুবকের বাবা মো. মোস্তফা জমাদ্দার। এ ঘটনায় সুমনের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস পর্যন্ত পায়নি নিহতের পরিবার। সুমনের এক সহযোগী কদমতলা এলাকার এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এতে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে কিশোরীর পরিবারকে হুমকি এবং এ ঘটনায় অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সুমন ও তার প্রশ্রয়দাতা মন্টু। এছাড়া বিভিন্ন সময় প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার একাধিক অভিযোগ রয়েছে এই সুমনের বিরুদ্ধে।
মোকামিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য ও নির্যাতিত শিক্ষিকার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবারের ঘটনা তিনি স্থানীয়দের কাছে শুনে তাৎক্ষণিক সেখানে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ওই শিক্ষিকার আর্তচিৎকার শুনে তার কাছে যান। পরে তার কাছে ঘটনা শুনে তিনি সংশ্লিষ্ট মোকামিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল আলম সুজনকে ফোন দেয়া শুরু করেন। এ সময় পাশ থেকে এসে মন্টু মেম্বার তাকে ফোন দিতে নিষেধ করে বলেন, ‘বিষয়টি কাউকে জানানোর দরকার নেই। আমরা দুই মেম্বারই ঘটনাটির সালিশ করে দেই।’ পরে তিনি তার কথা উপেক্ষা করে চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানান। আমার ইউনিয়নের পাশের গ্রাম হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা এলাকার বাসিন্দা সুমন। সুমন হোসনাবাদ ইউনিয়ন থেকে এসে মোকামিয়া ইউনিয়নের ওই বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় মাদক বিক্রি ও সেবনসহ স্থানীয় হিন্দু পরিবারের স্কুলগামী কিশোরী ও নারীদের বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে। কিন্তু সুমনের ভয়ে ওইসব হিন্দু পরিবারের সদস্যরা কখনো কোথাও অভিযোগ করার দুঃসাহস করেনি।
ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল মান্নান বলেন, বছরে তিনেক আগের এক রাতে আমার একমাত্র ছেলে মো. তাইজুল ইসলামের চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে তাকে কুপিয়ে যখম করেছিল সুমন ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর অনবরত হুমকি দিয়ে আসছে সুমন ও তার সহযোগীরা। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
হোসনাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, সুমনের কাছে এলাকাবাসী জিম্মি। কেউ ভয়ে টুঁ শব্দটিও করতে সাহস পায়নি। সুমন একের পর এক অপরাধ সংঘটিত করেও অদৃশ্য কারণে পার পেয়ে যায়। সুমন আমাকেও প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছিল।
বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, শিক্ষিকাকে নির্যাতনের ঘটনার জের ধরে সুমনের ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে নানা অপরাধের বিষয়টি উঠে এসেছে। আমরা তার ব্যাপারে সব ধরনের খোঁজ নিচ্ছি। অপরাধ করে কেউ কখনো পার পায়নি। সুমনসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।খবর মানবজমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, ২৪ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস