আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতা এবং পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ক্যাসিনো থেকে পাওয়া টাকার ভাগ পেতেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। এ তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও আছেন।
রমনা থানায় করা অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় সম্রাট ১০ দিন এবং তাঁর সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমান ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। গতকাল তাঁদের রিমান্ডের তিন দিন পার হয়েছে। র্যাব-১ কার্যালয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদের কাছ থেকে তিনি ক্যাসিনোর টাকা পেতেন। ১০টি ক্যাসিনো সম্রাটের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এসব ক্যাসিনোর টাকার হিসাব-নিকাশ রাখার দায়িত্ব ছিল আরমানের। আরমান সেই টাকার ভাগ সবার কাছে পৌঁছে দিতেন। রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও ঢাকা মহানগর পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়মিত টাকা দিতেন। তদন্তের স্বার্থে সেসব পুলিশ কর্মকর্তার নাম জানাতে রাজি হননি তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম গতকাল শনিবার বলেন, যুবলীগের দুই নেতা সম্রাট ও আরমানকে ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করে তাঁরা কত টাকা আয় করেছেন, এসব টাকা তাঁরা কাদের দিয়েছেন, এসবের সঙ্গে জড়িতদের নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে।
৬ অক্টোবর ভোরে ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও আরমানকে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেখানে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়ায় আরমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আর সম্রাটের তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই দিন দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অভিযান চালান। এই ভবনে সম্রাটের কার্যালয় ছিল। সেখানে ক্যাঙারুর চামড়া পাওয়া যাওয়ায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গ্রেপ্তারের পর দুজনকেই যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে থাকা অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম ভূঁইয়া ওরফে সেলিম প্রধানকে আজ রোববার র্যাব-১-এর কার্যালয়ে আনা হতে পারে। গত শুক্রবার তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সেলিম প্রধানকে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে আনা হয়। পরে তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁর গুলশান ২ নম্বরের বাসা, অফিসে ও বনানীর অফিসে অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সমপরিমাণ ২৩টি দেশের মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ১৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক, ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, একটি বড় সার্ভার, চারটি ল্যাপটপ ও দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করেন। অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় আক্তারুজ্জামান ও রোকন নামে সেলিম প্রধানের দুই সহযোগীকে আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে গুলশান থানায় দুটি মামলা হয়।
:প্রথম আলো