মডেল-অভিনেত্রীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের হুমকি দিয়ে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা।

তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকে নেতিবাচক হ্যাকিংয়ের মতো কাজে জড়িয়ে পড়েন ২৩ বছরের সামির আল মাসুদ। পড়াশোনার দৌঁড় উচ্চ মাধ্যমিক হলেও হ্যাকিংটা ভালোই জানেন এ তরুণ। এরই সুবাদে অ্যানোনিমাস নামের হ্যাকিং গ্রুপে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল তার। জনপ্রিয় মডেল, অভিনেত্রী ও উঠতি তারকাদের ফেসবুক আইডি টার্গেট করে দখলে নিতেন অনায়াসে।

সামির আল মাসুদ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়লেও নিজেকে পরিচয় দেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে। অতিরিক্ত সময় ফেসবুক ব্যবহার করার ফলে এক সময় হ্যাকিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন সামির। শুরুর দিকে বেছে বেছে তরুণ নারী মডেল অভিনেত্রীদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। বন্ধুত্বের আবেদনে সাড়া দেওয়ার পর টু ফ্যাক্টর অথরিটি ও ট্রাস্টেড কন্টাক্টারের মাধ্যমে মডেল-অভিনেত্রীদের ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নিতেন সামির আল মাসুদ।

তারকাদের ফেসবুক আইডি দখলে নিয়ে তাদের বার্তা বক্সে হুমকি দিতেন আপত্তিকর ছবি ও তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার। দাবি করতেন মোটা অঙ্কের টাকা। কখনো টাকায় সমাধান করতেন, কখনো আবার টাকা হাতিয়ে নিয়েও ফেরত দিতেন না আইডি। তারকাদের কাছ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আয় করা এসব টাকা তিনি ব্যয় করতেন নেশা করে।

এভাবে গত এক বছরে সে অন্তত ৩০ জন মডেল-অভিনেত্রীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অর্থ আদায় করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সর্বশেষ মিস ওয়ার্ল্ড ২০১৮-এর প্রথম রানার্স-আপ নিশাত নাওয়ার সালওয়ার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে। দশ হাজার টাকা নিয়েও আইডি ফেরত না দিয়ে শুরু করে টালবাহানা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের দ্বারস্থ হন নিশাত। তার অভিযোগের পর বুধবার (২৯ মে) বিকালে খিলক্ষেত থেকে আলোচিত এই হ্যাকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ জানান, নিশাত নাওয়ার সালওয়ারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সহায়তায় মাসুদকে সনাক্ত করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিয়মিত উঠতি মডেল ও অভিনেত্রীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার কথা স্বীকার করেছে।

তিনি আরও জানান, নিশাত নাওয়ার সালওয়ার কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিয়েছিলেন সামির। সেই সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করি আমরা। গ্রেফতারের পর তিনি জানিয়েছেন, জনপ্রিয় ও উঠতি নারী মডেলদের টার্গেট করতেন। এরপর টার্গেট পিপলদের ফেসবুক বন্ধু হয়ে তাদের আইডি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতেন। পরে টাকা চেয়ে হুমকি দিতেন। এদের ভেতরে যদি কারো আইডিতে ন্যুড ছবি পাওয়া যেত তার কাছ থেকে বেশি টাকা দাবি করতেন। না দিতে চাইলে হুমকি দেওয়া হতো। তাকে রিমান্ডে এনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ডনস টিম ও সাইবার শটসহ আরো কয়েকটি হ্যাকিং গ্রুপ আছে বাংলাদেশে। এসব গ্রুপে আমাদের সাইবার ক্রাইমের অনেক সদস্য যুক্ত আছেন কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে। আমরা নজর রাখছি তাদের গতিবিধির ওপর। গ্রুপের সদস্যরা অপরাধে জড়িয়ে পড়লে আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। রমনা থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া সামির আল মাসুদকে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) আদালতে তোলার কথা রয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তারকাদের বন্ধু নির্বাচনে আরও সতর্ক হতে হবে। আর কোনও ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে সাইবার ইউনিটের পরামর্শ নিতেও বলেন তিনি।

লেটেস্টবিডিনিউজ/কেএস

Scroll to Top