বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের লাশ, নেপথ্যে কলির একাধিক বয়ফ্রেন্ড!

আশিক ই এলাহি ও ফারিহা কলি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। তাদের কলেজও ছিল একই। আশিকের বাড়ি ভোলায় আর কলির বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। বাড়ি দুই জেলায় হলেও বন্ধুত্ব থেকে তাদের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাইলস্টোন কলেজের সাবেক ওই দুই শিক্ষার্থীর একজন এখন না ফেরার দেশে চলে গেছেন। গার্লফ্রেন্ড কলির বাসা থেকে আশিক নামে ওই ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে তাকে পরিকল্পিতভাবে বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর এর নেপথ্যে কাজ করেছে কলির একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়টি। একাধিক বয়ফ্রেন্ড আছে কলির এমন সন্দেহ থেকেই আশিকের সঙ্গে তার মনোমালিন্য শুরু হয়। সেটি অবশেষে ভয়ংকর পর্যায়ে চলে গেছে। বয়ফ্রেন্ড আশিককে হত্যার অভিযোগে কলি এখন কারাগারে রয়েছেন। একদিনের রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। জেলগেটেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। রিমান্ডে কলির কৌশলী উত্তরে পুলিশ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তাই তাকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। লাশ উদ্ধারের পেছনে কলির কোন ফ্রেন্ডের সংশ্লিষ্টা আছে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে চায় পুলিশ।

পুলিশের এক সূত্র জানিয়েছে, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ছাত্রী ফারিহা কলির সঙ্গে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশিকের প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও সেটি ভাঙনের পর্যায়ে ছিল। কলির একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। ক্যাম্পাসে কলির চলাফেরা নিয়ে আশিকের সঙ্গে তার মনোমালিন্য চলছিল। এরই মাঝে কলির ফ্ল্যাট থেকে আশিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কলির পরিবারের সদস্যদের দাবি আশিক আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে আশিকের পরিবারের সদস্যদের দাবি তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরসঙ্গে কলি ও তার অন্য কোন বয়ফ্রেন্ড জড়িত থাকতে পারে। ওই সন্দেহের ভিত্তিতেই তারা হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যে ১০জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে ঘটনার বিষয়ে এখনও কোন নির্ভরযোগ্য ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ।

পুলিশের আরেকটি সূত্র বলছে, ফারিহা কলির সম্প্রতি এক চিকিৎসকের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়। তাই কলি আশিকের কাছ থেকে সরে আসতে চেয়েছিলেন। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি আশিক। তাই হয়তো তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে আশিক কলির বাসায় রাতে প্রবেশ করেছে নাকি ভোরে প্রবেশ করেছে, কিভাবে বাসায় প্রবেশ করেছে তার কোন সঠিক কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অনেকটা ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে।

এদিকে ফারিহা কলির রিমান্ড শেষ হয়েছে রোববার। তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ফারিহার ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালাত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। নিহত আশিকের বড়ভাই আল-আমিনের দায়ের করা মামলায় কলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহত আশিক এলাহির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে দাফন করা হয়েছে। তবে তার ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।

আশিকের চাচা ও টবগী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি উজ্জ্বল হাওলাদার বলেন, আমার মেধাবী ভাতিজাকে যে বা যারাই হত্যা করে থাকুক তাদের কঠোর শাস্তি চাই।

আশিকের বড় ভাই আল-আমিন বলেন, ভাটারা থানা পুলিশ মঙ্গলবার আত্মহত্যার প্ররাচণা ও পরিকল্পিত হত্যা এমন বিষয়ের অভিযোগ নিয়েছে।

আশিকের পরিবারের অভিযোগ, তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আশিক আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ছাত্র। তার গার্লফ্রেন্ড ফারিহাও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়ার সুবাদে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে প্রেম নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এরই মাঝে মঙ্গলবার গার্লফ্রেন্ড ফারিহার বাসা থেকে আশিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আলামিন কাওসার অপু বলেন, ফারিহা কলির রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আবারো তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কলির রুমমেট নুসরাত আঞ্জুম দিনাজপুর বাড়ি। তারা একই ফ্লাটে থাকেন। কলির একাধিক বয়ফ্রেন্ড ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। আশিকের লাশ উদ্ধারের পেছনে কলি ছাড়া তার অন্য ফ্রেন্ডের হাত আছে কিনা তা এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলে পুরোপুরি বোঝা যাবে ঘটনাটি আসলে কি ঘটেছে।

Scroll to Top