১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে নুসরাত হত্যার মিশন

স্থানীয় প্রশাসনের সব ধরনের সহায়তা পাবার নিশ্চয়তা নিয়েই ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদ্রাসাছাত্রী ও আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। দুটো মাধ্যম থেকে পাওয়া যায় ১৫ হাজার টাকাও। ৪ এপ্রিল রাতে ১ ঘন্টার বৈঠকে পরিকল্পনা হয়, নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচারের। এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে জবানবন্দি দেয়া দুই আসামী নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমের মুখে। এখনো গ্রেপ্তার না হওয়া হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ ৬ অভিযুক্তের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে পিবিআই।

নুসরাত হত্যার ঘটনায় বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। যার ওপর ভিত্তি করে জড়িতদের আটকের চেষ্টা করে যাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সবশেষ মো. শামীম ও শরীফ নামে আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর নুসরাতকে আগুন দেয়ার ঘটনায় অর্থেরও লেনদেন হয়। এ জন্য পরিকল্পনাকারি শাহাদাত হোসেন শামীম ও নুর উদ্দিনকে ১৫ হাজার টাকা দেয় স্থানীয় কাউন্সিলর মাকসুদ ও সেলিম নামে এক শিক্ষক। ঘটনার পর মামলা হলে সোনাগাজি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন সার্বিক বিষয় দেখাশেনা করবেন বলেও অধ্যক্ষ সিরাজ নিশ্চয়তা দেয় হত্যায় অংশ নেয়া জাবের, শামীম এবং জুবায়েরকে।

পিবিআই প্রধান জানান, পুরো ঘটনায় তিনজনের সম্পৃক্ততার কথা জানালেও, সময়ের সাথে বাড়ছে অভিযুক্তের সংখ্যা। গ্রেপ্তার না হওয়া হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ ৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে পিবিআই। এদিকে সোমবার (১৫ এপ্রিল) নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, এই পপি ওরফে শম্পাই আগুন লাগানোর বোরকা এনে দিয়েছিল। এদিকে, নুসরাতের ঘটনায় পুলিশ ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করেনি বলে অভিযোগ মানবাধিকার কমিশনের। নুসরাতের ওপর নির্যাতন ও হত্যাকান্ডসহ সাম্প্রতিক নারী নির্যাতনের ঘটনা বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান।

এসময় তিনি বলেন, এ হত্যাকান্ডের অপরাধীদর শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে মানবতা হেরে যাবে। কেন ৫৪ ধারায় নুসরাতের জবানবন্দি নিয়েছে পুলিশ তা তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে অনুরোধ করেন রিয়াজুল হক। নুসরাতের জবানবন্দি ভিডিও করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন কমিশন চেয়ারম্যান। নুসরাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আট আসামির সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (৬ এপ্রিল) সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে সকাল ৯টার দিকে ওই ছাত্রী যায়, আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে। পরে তাকে কৌশলে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪ থেকে ৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ৮ জনকে এজাহারভূক্ত ও অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করে পরিবার।

Scroll to Top