তামিম-সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি। এরপর আর বড় ইনিংস খেলতে পারেনি কেউ। শেষমেশ ২৬০ রানে গুটিয়ে গেল টাইগারদের প্রথম ইনিংস। সাকিব আল হাসান করলেন ৮৪ রান। আর তামিম ইকবাল করলেন ৭১ রান। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্যাট কামিন্স ৩টি, নাথান লায়ন ৩টি, অ্যাশটন আগার ৩টি ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ১টি করে উইকেট নিলেন।
দীর্ঘ ১১ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলতে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। মিরপুরে শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ৭৮.৫ ওভার ব্যাট করে বাংলাদেশ।
দলের ওপেনিং ভূমিকায় নামেন তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বিদায় নেন সৌম্য সরকার। ওপেনিং জুটি ভাঙে দলীয় ১০ রানের মাথায়। প্যাট কামিন্সের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে পিটার হ্যান্ডসকম্বের হাতে ধরা পড়েন বাঁহাতি এই ওপেনার। ব্যক্তিগত ৮ রানে ফেরার আগে দুটি বাউন্ডারির দেখা পান তিনি। তামিমকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি ইমরুল কায়েসও। দলীয় ১০ রানেই তিনি সাজঘরে ফেরেন। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে সৌম্যর হন্তারক কামিন্সের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইমরুল। পরের বলেই উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েডের কাছে ক্যাচ দেন সাব্বির রহমান। তার ব্যাট মাটিতে স্পর্শ করেছিল, সন্দেহ থাকায় রিভিউ নেন। কিন্তু টিভি আম্পায়ার আগের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন। দলীয় ১০ রানেই তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস আর সাব্বির রহমান দ্রুত ফিরলে বড় বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়েই হুঙ্কার দেন নিজেদের ৫০তম টেস্ট খেলতে নামা দলের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব ও তামিম। প্যাট কামিন্সের দারুণ ডেলিভারিতে প্রথম ৪ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। বাজে শুরুর পর তামিম, সাকিবের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ ছিল ৯৬/৩। ৩০তম ওভারে দলীয় শতকের দেখা পায় বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই সাকিব হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান। ৬৫ বলে করেন ৫০। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি সাকিবের ২২তম ফিফটি। সাকিবের পর নিজের পঞ্চাশতম টেস্টে অর্ধশতক তুলে নেন তামিম। ১১৯ বলে আসে তার ২৩তম অর্ধশতক। ২৪টি অর্ধশতক করে তামিমের আগে কেবল হাবিবুল বাশার।
প্যাট কামিন্স ঝড়ে এলোমেলো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন সাকিব-তামিম। ইনিংসের ৪৬তম ওভারে বিদায় নেন ১৪৪ বলে ৫টি চার আর ৩টি ছক্কায় ৭১ রান করা তামিম। ম্যাক্সওয়েলের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ওয়ার্নারের তালুবন্দি হন টাইগার ওপেনার। সাকিব-তামিম জুটিতে স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ১৫৫ রান। যা নিজেদের দ্বিতীয় শতরানের জুটি এবং সর্বোচ্চ (আগেরটা ১৩২ রানের)। দলীয় ১৬৫ রানের মাথায় বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়।
তামিম-সাকিবের অসাধারণ জুটির পর সেট ব্যাটসম্যান সাকিবকে নিয়ে ইনিংস সাজাচ্ছিলেন দলপতি মুশফিক। উইকেটে থিতু হওয়া সাকিব খেলছিলেনও নিজের ভঙ্গিতেই, চেনা ছন্দে। তবে, ইনিংসের ৫৪তম ওভারের শেষ বলে স্পিনার নাথান লায়নের অফস্ট্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিব। স্লিপে দাঁড়ানো স্মিথের হাতে ধরা পড়ার আগে সাকিব ১৩৩ বলে ১১টি বাউন্ডারিতে করেন ৮৪ রান। দ্বিতীয় সেশনে হয় আরও ২৮ ওভার। তাতে বাংলাদেশ আরও ৯৪ রান তুলে হারায় সাকিব আর তামিমের উইকেট। তৃতীয় সেশনের আগে ৫৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১৯০/৫।
শেষ সেশনে নেমেই সাজঘরে ফেরেন টাইগারদের দলপতি মুশফিকুর রহিম। অ্যাস্টন অ্যাগারের বলে এলবির ফাঁদে পড়ার আগে মুশফিক ৫০ বলে করেন ১৮ রান। রিভিউ নিয়েও জীবন ফিরে পাননি তিনি। ইনিংসের ৬১তম ওভারে মুশফিকের বিদায়ে দলীয় ১৯৮ রানের মাথায় টাইগারদের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে। ৬৪.৪ ওভার শেষে বৃষ্টি নামে, তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২১৮/৬। দলীয় ২৪০ রানের মাথায় এলবির ফাঁদে পড়েন মেহেদি। ব্যক্তিগত ১৮ রান করে লায়নের বলে হ্যান্ডসকম্বের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ইনিংসের ৭৫তম ওভারে বিদায় নেন নাসির। অ্যাস্টন অ্যাগারের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এলেও প্যাড-ব্যাটে আঘাত করে বল। এলবির আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও রিভিউয়ে নাসিরকে ফেরায় অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ২৪৬ রানের মাথায় বাংলাদেশ অষ্টম উইকেট হারায়। পরের ওভারেই ৪ রান করা তাইজুলকে এলবির ফাঁদে ফেলেন লায়ন। শেষ ব্যাটসম্যান শফিউলকে ফেরান অ্যাগার। হ্যাজেলউডের হাতে ধরা পড়ার আগে শফিউল করেন ১৩ রান। মোস্তাফিজ কোনো রান না করে অপরাজিত থাকেন।
অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স তিনটি, স্পিনার নাথান লায়ন তিনটি, অ্যাস্টন অ্যাগার তিনটি আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল একটি উইকেট দখল করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ২৭ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি