টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। তাও সব রেকর্ড হারের লজ্জা নিয়ে। দলের মানসিক অবস্থাও সঙ্গীন। আত্মবিশ্বাস শূন্যের কোঠায়। বাংলাদেশ দল যেন এখন দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়তে পারলেই বাঁচে। কিন্তু এখনো সুযোগ আছে হারানো মান কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার করার।
পরাজয়ের বৃত্ত ভেঙে বের হওয়ার বড় সুযোগ সাকিব আল হাসানের টি-টোয়েন্টি দলের সামনে। আজ থেকে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। দুই ম্যাচের প্রথমটি ব্লুমফন্টেইনে মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায়। ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল। কিন্তু টানা তিন হারে দুমড়ে মুচড়ে গেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। তবে সাকিবকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন স্বপ্ন। ২০ ওভারের লড়াই বলে কথা। এখানে বড় ছোট দল বলে কিছু নেই। নিজেদের দিনে যে কেউ জয় ছিনিয়ে নিতে পারে। কিন্তু মানসিকভাবে ভেঙে পড়া টাইগাররা কতটা প্রস্তুত! সাকিব আশা প্রকাশ করেছেন সম্ভব। আর প্রোটিয়া ক্রিকেটার জেপি ডুমিনির এখনো ভয় বাংলাদেশকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘তারা (বাংলাদেশ) ভয়ঙ্কর হতে পারে। কারণ, তাদের এখন হারানোর কিছুই নেই। অথবা তারা হয়তো এক পা দিয়েই আছে বাড়ি ফেরার জন্য।’
গতকাল বাংলাদেশ অনুশীলন করেছেন প্লাণ নিয়েই। আগের রাতে টিম মিটিংয়ে টেলি কনফারেন্সে অংশ নিয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। হয়তো মন্ত্র দিয়েছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ইনজুরির কারণে দেশে ফিরেছেন। একই কারণে নেই সেরা পেসার মোস্তাফিজুর রহমানও। মাশরাফি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেয়াতে তার ছায়াও পাবে না দল। দলের ভরসা এখন অভিজ্ঞ সাকিব, মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকুর রহীম। সঙ্গে দলের তরুণ টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। তামিম না থাকায় ফর্মহীন সৌম্যকে ওপেনিং কে সঙ্গ দেবেন? ইমরুল কায়েস! মুমিনুলকেও রাখা হয়েছে দলে। হয়তো মিডল অর্ডারে দলের ভরসা হিসেবে তাকে মাঠে দেখা যেতে পারে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির বিজ্ঞাপন অধিনায়ক সাকিবতো বল ও ব্যাট হাতে থাকবেন লড়াইয়ে বড় ভরসা। শেষ ওয়ানডেতে দল ২শ’ রানে হারলেও তার ব্যাট থেকে এসেছে ফিফটি রানের একটি ইনিংস। ক্যাসিনোতে গিয়ে বিতর্কে জড়ানো নাসিরকে নাও দেখা যেতে পারে। তার পরিবর্তে দলে আসতে পারেন লিটন কুমার দাস।
ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা একটু কম থাকলেও বোলিংয়ের কী হবে? টেস্ট ও ওয়ানডেতে তাসকিন, শফিউলরা কিছু করতে পারেননি। তার উপর তারা দু’জনও জড়িয়েছেন ক্যাসিনো বিতর্কে। তাই রুবেল হোসেন হতে পারেন ভরসা! সঙ্গে তরুণ পেসার সাইফউদ্দিনকে একাদশে রাখা হতে পারে। স্পিন শক্তি বাড়াতে হয়তো মিরাজকেও দেখা যেতে পারে দলে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। জয় দেখেনি কোনটিতেই। প্রথম দুটি দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৭ ও ২০০৮ সালে। প্রথমটিতে ৭ উইকেট আর পরেরটিতে ১২ রানে হেরেছে টাইগাররা। শেষ দুটি ২০১৫তে বাংলাদেশের মাটিতে। নিজ দেশেই প্রোটিয়াদের টি-টোয়েন্টিতে হারাতে পারেনি মাশরাফির দল। আর দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন পর্যন্ত খেলেছে ৪৪ ম্যাচ যার মধ্যে ২৫টিতে জিতেছে। আজকের ভেন্যু ব্লুমফন্টেইনে একটি ম্যাচ খেলেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যাতে ৭ উইকেটের বড় জয় তুলে নিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়মিত অধিনায়ক ডু প্লেসি ইনজুরিতে মাঠের বাইরে। তার পরিবর্তে দলের নেতৃত্ব দিবেন ডুমিনি। তার সঙ্গে কিন্তু ভয়ঙ্কর তিন ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা, ডি ভিলিয়ার্স ও কুইন্টন ডি কক। এ তিনজনই টাইগার বোলারদের নিয়ে দুই সিরিজে ছিনিমিনি খেলেছেন। খেলার সম্ভাবনা রয়েছে ডেভিড মিলারেরও। কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষ এতটাই কঠিন যে এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো স্বপ্নপূরণ একেবারেই ক্ষীণ। তারপরও সাকিব আল হাসানকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ!
যে কারণে টাইগারদের সমীহ করছে প্রোটিয়ারা
সফরে দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সহজ জয় দেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবুও টাইগারদের সমীহ দেখাচ্ছে প্রোটিয়ারা। আজ দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামছে দু’দল। ম্যাচ সামনে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি দলের নবীন তারকা ৩৩ বছর বয়সী রবি ফ্রাইলিংক বলেন, ম্যাচে প্রতিপক্ষ প্রত্যেক দলকেই সম্মান দেখাতে হয়। আপনি যদি তাদের বাতিলের খাতায় ফেলেন তাহলে মাঠে আপনার তিক্ত অভিজ্ঞতা হতে পারে। টেস্ট ও ওয়ানডেতে যাই ঘটুক না কেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে একটি শক্তিধর দল। বিশ্বজুড়ে ভিন্ন ভিন্ন টি- টোয়েন্টি আসরে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। এমন দলকে সম্মান দেখাতেই হয়। টি-টোয়েন্টি ভিন্ন ধরনের খেলা। আমি নিশ্চিত তারা মাঠে সামর্থ্যের ২০০% দিতে চাইবে। টি-টোয়েন্টিতেও হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে ভালো। তবে এখনই অতদূরে দেখছি না আমরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, ২৬ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস পি