বাজে হারে আরেকটি ‘হোয়াইটওয়াশ লজ্জা’ পেল বাংলাদেশ

আরো একবার টাইগার বোলারদের দুর্বল বোলিং! বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা মিটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৬৯ রান তোলে। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে প্রথমবার টসে জিতে রেকর্ড সংগ্রহ করে ডু প্লেসির দল। এর আগে ২০০৮ এ বিনোনিতে প্রোটিয়ারা টাইগারদের বিপক্ষে করেছিল ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৫৮ রান। গতকাল ইস্ট লন্ডনে ৯ বছর পর নিজেদের ছাড়িয়ে গেল তারা। এখন পর্যন্ত টাইগারদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কোনো দলই ৪শ’ করতে পারেনি। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের ৪ উইকেটে ৩৯১ রানের রেকর্ডটা অক্ষত রইলো।

গতকাল প্রোটিয়া অধিনায়কের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শঙ্কা জেগেছিল সব রেকর্ড ভেঙ্গে যাওয়ার। ৬৭ বলে ১০ চার ও এক ছয়ে ৯১ রান করেন ডু প্লেসি। সেই সময় তাদের দলের সংগ্রহ ৪০.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২৮৩ রান। কিন্তু হঠাৎ করেই দ্রুত রান নিতে গিয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ক্যারিয়ারের ৯ম সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন মাত্র ৯ রানের জন্য। তিনি ক্রিজে থাকলে কতদূর যেতেন বলা মুশকিল। এরপর দ্রুত আরো ৪ উইকেট পড়লেও পেসার রাবাদার ১১ বলে করা ২৩ রানে বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহটা এখন দক্ষিণ আফ্রিকার। পাকিস্তন ৩৮৫/৭ ও ভারত ৩৭০/৪ রান করে আছে তাদের উপরে। প্রথম ওয়ানডেতে মাশরাফি বাহিনীর ২৭৮ রানের জবাবে ১০ উইকেটের রেকর্ড জয় পায় প্রোটিয়ারা। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে করেছিল ৩৫৩। প্রতিটি ম্যাচে ফুটে উঠেছে বাজে বোলারদের অসহায়ত্ব।

টেস্ট সিরিজে দুই ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিং নেয় মুশফিকুর রহীমের দল। কিন্তু দু’বারই ভুল সিদ্ধান্তের ফলাফল হোয়াইটওয়াশ। যে কারণে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাশরাফি টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও হার এড়াতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচে টসে জয়, এবার ভুল শুধরাতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এবার রানের চাপে পড়ে টাইগাররা। অবশ্য সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রোটিয়ারা টসে জিতে ব্যাটিং নিতে ভুল করেনি। এ স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮ ম্যাচের মধ্যে ১১ বার টসে জিতে ৭ বার আগে ব্যাট করে জয় পায়, বাফেলো পার্কে প্রোটিয়াদের এত দিন দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৫ সালে করা ৭ উইকেট হারিয়ে ৩১১ রান। সেবারও টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা।

গতকাল অধিনায়কের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতে সময় নেননি দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও টেমবা বাভুমা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে যেন হাশিম আমলার আভাব বুঝতে দিচ্ছিলেন না তিনি। ডিককের সঙ্গে গড়ে তোলেন ১১৯ রানের জুটি। প্রথম ম্যাচের পর সিরিজের শেষ ম্যাচেও শতরানের জুটি উপহার দেন ওপেনাররা। দলের তিন পেসার ও সেরা স্পিনার সাকিব আল হাসানকে যেন পাত্তাই দিচ্ছিলেন না তারা। বাভুমা ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এ ম্যাচেও যেন সেই প্রত্যয়। ৪৭ বলে করেন ৪৮ রান। কিন্তু দুই ওয়ানডেতে একাদশের বাইরে ধাকা অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ তাদের লাগাম টেনে ধরেন। রাউন্ড দা উইকেটে করা মিরাজের বল উড়িয়ে মেরেছিলেন বাভুমা। টাইমিং ঠিকমত হয়নি। লং অনে ক্যাচ নিয়েছেন লিটন দাস। এর পর দলের হাল ধরতে এসে শুরুতে জীবন পান ডু প্লেসি। মিরাজের বলে ব্যাট-প্যাড ক্যাচের আবেদনটি ছিল বেশ জোরাল। কিন্তু আউট দিলেন না আম্পায়ার। উইকেটকিপারের সঙ্গে কথা বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। হয়ত কিপারের ছিল সংশয়। নিলেন না রিভিউ। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় রিভিউ নিলেই ফলাফল আসতো বাংলাদেশের দিকে। তবে হাল ছাড়েননি মিরাজ। প্রথম উইকেটের পর তার হাত ধরেই আসে দ্বিতীয় উইকেট। ফিরিয়ে দিলেন বিপজ্জনক কুইন্টন ডি কককে। ডি কককে বেরিয়ে আসতে দেখেই একটু টেনে বোলিং করেছিলেন মিরাজ। তার পরও খেলেছিলেন অন সাইডে। ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠল শুধুই ওপরে। নিজের বলে ক্যাচ নিলেন মিরাজই। ৬৮ বলে ৭৩ রানে ফিরলেন ডি কক। ২১.১ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে ১৩২।

সেখান থেকে দলকে টানেন ডু প্লেসি। সঙ্গে অভিষিক্ত মার্করাম। ১১৬ বলে দলকে উপহার দেন আরো একটি দেড় শ’ রানের জুটি। মিরাজ যে লাগাম টেনেছিলেন তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় বাকি বোলাররা। অধিনায়ক মাশরাফি নিজে সহ আরো ৬ বোলারকে ব্যবহার করেন। কিন্তু মিরাজ ছাড়াও সবাই ব্যর্থ। ঠিক সেই সময় দ্রুত দুটি রান নিতে গিয়ে পিঠের পিছনে টান লাগে ডু প্লেসির। এর মধ্যে মার্করাম তুলে নিয়েছিলেন তার অভিষেক ফিফটি। ৬০ বলে ৪ চার ও ২ ছয়ে করেন ৬৬ রান। কিন্তু রান নেয়ার তাড়াহুড়াতে ইমরুলের দারুণ থ্রোতে রান আউট হন। এরপর আগের ম্যাচে ১৭৬ রান করা ডি ভিলিয়ার্সকে এ ম্যাচেও আউট করেন রুবেল হোসেন। ২০ রান করে ভয়ঙ্কর ভিলিয়ার্স ফেরায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে টাইগার শিবিরে। কিন্তু রাবাদা ও ২৪ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত ফারহান বেহারদিন দলকে এনে দেন রেকর্ড সংগ্রহ। অবশ্য এর আগে ওয়ানডে সিরিজে প্রথম উইকেটের দেখা পান পেসার তাসকিন। তার বলে ২ রানে আউট হয়ে অভিষেকে তেমন কিছু করতে পারলেন না অলরাউন্ডার উইয়ান মুল্ডার। তাসকিনের আরেক শিকার ৫ রান করা ফেলুকওয়ায়ো। শেষ দিকে বোলাররা কিছু উইকেট পেয়েছেন অবশ্য প্রোটিয়াদের রানের গতি বাড়ানোর তাড়াহুড়াতে।

ইনজুরিতে ডু প্লেসি

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম শতকের অপেক্ষায় তখন ফাফ ডু প্লেসি। গতকাল বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত ৯১ রানে ব্যাট করছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। কিন্তু পিঠের ইনজুরি নিয়ে ক্রিজ ছাড়তে হয় তাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ৪০.১তম ওভার শেষে প্রোটিয়া এক অফিশিয়ালের পিঠে চড়ে মাঠ ছাড়েন ডু প্লেসি। আর প্রোটিয়া বোর্ড ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) এক বিবৃতিতে জানায়, আরো পরীক্ষা নীরিক্ষা শেষে জানা যাবে ডু প্লেসির প্রকৃত অবস্থা । গতকাল ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্ক মাঠে ৬৭ বলের ইনিংসে ডু প্লেসি হাঁকান ১০টি চার ও একটি ছক্কা। দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি মাঠে গড়াবে আগামী ২৬শে অক্টোবর।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, ২৩ অক্টোবর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি