এক পায়ে প্যাড তাদের, অন্য পা খালি…

আপনাকে যদি প্যাড ছাড়া ব্যাটিং করতে বলা হয়, করবেন? এই প্রশ্নটা দেখেই নিশ্চয় শক্ত বল এবং পায়ের হাঁড়ের \’সংযোগে\’র ভয়টা আপনাকে পেয়ে বসেছে! এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বুধবার মিরপুরে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের দেখা গেলো এক পায়ে প্যাড পরে ব্যাটিং করতে। সেটাও পিছনের পা। মানে সামনের পায়ে প্যাড না পরেই ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন উসমান খাজা ও ম্যাট রেনশরা।

নেটে ওভারের পর ওভার নিরবিচ্ছিন্নভাবে ব্যাটিং করে যাওয়া এমনিতেই কষ্টকর ব্যাপার। তার উপর প্যাড ছাড়া; নিশ্চয় এভাবে ব্যাটিং করাটা ব্যাটিং অনুশীলনের সম্ভাব্য সবচেয়ে কঠিন উপায়। ভয়ানক সব বাউন্সারের চেয়েও কঠিন প্যাড ছাড়া ব্যাটিং করা। কারণ এভাবে ব্যাটিং করা মানে প্রতি মুহূর্তে পায়ের হাঁড়ে বল লাগার ভয় পাওয়া।

তারপরও অস্ট্রেলিয়ানরা এমন অদ্ভুত উপায় কেনো বেছে নিলেন? উত্তর হলো— তাইজুল ইসলাম, সাকিব আল হাসান ও মেহেদি মিরাজদের স্পিনের সামনে যুদ্ধটা সহজ করতেই মূলত প্যাড বাদ দিয়ে অনুশীলন করেছে অস্ট্রেলীয়রা।

\"\"

রাহুল দ্রাবিড়, মাইকেল ভন এবং ডিন জোন্সের মতো সাবেক ব্যাটসম্যানরা নানা সময়ে প্যাড ছাড়া ব্যাটিংয়ের নানা উপকারিতার কথা বলেছেন। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এসে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েলে বলে গেলেন প্যাড ছাড়া ব্যাটিং অনুশীলনের কথা।

২০১২ সালে, জাস্টিন ল্যাঙ্গার যখন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং কোচ, তখনই প্রথমবার অনুশীলনে প্যাড ছাড়া ব্যাটিং করেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা। এতে উইকেটে টিকে থাকার জন্য কেবল ব্যাটের উপরই নির্ভর করতে হয় ব্যাটসম্যানদের। অর্থাৎ পায়ে প্যাড না থাকলে ব্যাটসম্যানরা সহজাতভাবেই প্রতিটি বল ব্যাটে লাগাতে চান, ডিফেন্সিভ শট খেলার চেষ্টা করেন। এ ধরনের অনুশীলন দারুণ কাজে দেয় ওভারের পর স্পিনারদের খেলার সময়।

স্টিভ স্মিথরা নিশ্চয় জানেন যে, বাংলাদেশের সামনে তাদেরকে স্পিন খেলতে পারার কঠিনতম প্রমাণই রাখতে হবে। এই কাজে ব্যর্থ হওয়া মানেই বাংলাদেশের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়া। সিরিজ শুরুর তিনদিন আগে, স্পিন আতঙ্কই যেনো পেয়ে বসেছে অসিদের।

ব্যাট ছাড়া অনুশীলনের ব্যাখ্যায় ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘এ ধরনের অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যাটসম্যান শুধুমাত্র ব্যাটের উপরই নির্ভশীল থাকে। এতে করে এলবিডব্লিউয়ের শঙ্কাটা কমে আসে। এর আগে, চলতি বছরের শুরুতে ভারত সফরের আগে দুবাইয়ে এ ধরনের অনুশীলন করেছিলো অসিরা।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশি স্পিনাররা একের পর এক বল স্ট্যাম্পে দিয়ে যায়। তারা এই কাজে সত্যিই খুব ভালো। অর্থাৎ তারা ব্যাটসম্যানের রক্ষণাত্মক খেলার উপর চাপ প্রয়োগ করতে খুবই দক্ষ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা অনুশীলন করে যাচ্ছি।’

২০১০ সালে, ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের আগে কেভিন পিটারসেন রাহুল দ্রাবিড়কে মেইল করে স্পিনারদের খেলার বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত কেভিন পিটারসেনের জীবনীতে উল্লেখ আছে, দ্রাবিড় সেই মেইলের উত্তরে তাকে প্যাড ছাড়া অনুশীলন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

স্পিন খেলার যতো প্রস্তুতিই অস্ট্রেলিয়ানরা নিক না কেনো, বাংলাদেশের সামনে স্পিনেই তাদের দিতে হবে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। অস্ট্রেলিয়া সেই পরীক্ষার পাশ নম্বর কতোটা পাবে— তা বলে দিবে সময়ই। তবে অতীত বলে যে, এ বছরের ভারত সফরে তাদের বিপক্ষে চার ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়েছিলেন রবিন্দ্র জাদেজা। অশ্বিন নিয়েছিলেন ২১ উইকেট। দুজনের পারফর্মের কাছেই সিরিজটি হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া।

ভারত সফরের আগেও নিশ্চয় এভাবে প্যাড ছাড়া অনুশীলন করে এসেছিলেন স্টিভ স্মিথ-গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা!

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, ২৪ আগস্ট ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস

Scroll to Top