সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে

সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে
জেলেরা সাগরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন - সংগৃহীত ছবি

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে। বরগুনার তালতলী উপজেলার জেলেরা এরই মধ্যে সাগরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাগরে যাওয়া নিয়ে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ও জেলে পল্লীগুলোতে। দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই মাছ ধরার জন্য ফের সাগরে যাবেন জেলেরা।

মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তালতলী উপজেলায় সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৮ হাজার ২০০ জন। এর ভেতরে ৫ হাজার ২০০ জন জেলে সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিবন্ধিত জেলেদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে ৫৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।

তালতলীর জেলে পল্লী ঘুরে দেখা যায়, সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউ জাল ট্রলারে উঠাচ্ছেন, কেউবা ট্রলারে থাকাকালীন খাদ্য সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় বাজারের কাজ সেরে ফেলছেন। দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে নামার আগ মুহূর্তে জেলেদের চোখে-মুখে নতুন আশা, জালে ধরা পড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ফের প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে উপজেলার ফকিরহাট উপমৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।

ডনদ্রা জেলে পল্লীর মো. মিঠু সরদার বলেন, দীর্ঘ দুমাস পর নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের কিছুটা উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও পাশাপাশি ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। অনেকের ঋণ রয়েছে। কিন্তু দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় পরিশোধ সম্ভব হয়নি। এখন মাছ ধরে নিজের চলতে হবে, ঋণও পরিশোধ করতে হবে। এবার অনেক আশা নিয়ে আমরা সাগরে নামব। কারণ গত বছর আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যায়নি। আশা করছি এ বছর প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।

মালিক ও আড়তদাররা বলেন, প্রতি মৌসুমে তারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়। কিন্তু মৌসুমের শেষভাগে বিপুল টাকা বিনিয়োগে অনেকেরই অনীহা। এছাড়াও মাত্র দুই মাস পরই ফের মা-ইলিশের ২২ দিনের জন্য সাগর এবং নদীতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

মৎস্যজীবী সমিতি ও ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সুলতান ফরাজী বলেন, এই উপজেলার জেলেরা ৬৫ দিনের সরকারি নির্দেশনা পালন করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো ট্রলার সাগরে যেতে দেওয়া হয়নি। তাই রাত ১২ টার পরপরই জেলেরা গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে যাচ্ছেন।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ‘সাগরে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে পালন করা হয়েছে। স্থানীয় বরফকলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’

উল্লেখ্য, মৎস্যসহ মূল্যবান প্রাণীজ সম্পদ সুরক্ষায় গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতাকে অনুসরণ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো অন্য মাছ আহরণেও ছিল এ নিষেধাজ্ঞার আওতায়।