ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় কেন এত ‘ফেল’

সাখাওয়াত আল আমিনঃ চলছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মৌসুম। ইতোমধ্যে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহন ও ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ-ইউনিট(ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) এবং খ-ইউনিটের(কলা অনুষদ)ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর একটি বিষয় ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসছে। তা হলো কত শতাংশ পাশ করলো।‘পাশের হার কম’ হলে সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। মিডিয়াগুলোও ইদানিং ওই পাশের হারকে শিরোনাম করে সংবাদ প্রচার করছে।এতে অনেকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন, সন্দিহান হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা নিয়ে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নানা ত্রুটি, প্রশ্ন ফাঁস, শিক্ষকদের সক্ষমতা, পাঠন-পঠন পদ্ধতি, সিলেবাস ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, আছেও। কিন্তু কেবল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার পাশ-ফেলের হিসেব দিয়ে সে বিষয়ে উপসংহার টানা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা ভেবে দেখার অবকাশ আছে।

সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় পাশ-ফেল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় পাশ ফেলের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক নম্বর(৩৩শতাংশ) পেলেই পাশ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় পাশ(মেধা তালিকায় নাম আসনা) করতে হলে শিক্ষার্থীদের পেরোতে হয় নানা শর্তের গণ্ডি। তাছাড়া নির্দিষ্ট নম্বর পাওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি বিষয়ে তাকে আলাদাভাবে পাশ মার্ক তুলতে হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন মোট ১২০ নম্বরের লিখত পরীক্ষা নেওয়া হয় যার মধ্যে পাশ নম্বর ৪৮। তাছাড়া যে বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয় প্রত্যেকটি বিষয়ে পেতে নির্দিষ্ট সংখ্যক নম্বর। সব শর্ত পুরণ হলে তবে তার নাম মেধা তালিকায়(পাশ) আসে। সুতরাং সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এক নয়।

মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে অবশ্যই দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র উঠে আসে। এখানে পাশ-ফেলের হারে অনেক কিছুই যায় আসে। এখানে পাশ মানে পাশ, সে পরবর্তী ধাপে উত্তির্ণ।কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ‘পাশ’ মানেই ভর্তির নিশ্চয়তা নয়। এখানে আসন সংখ্যা সীমিত।তাই এটি সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা।যেখানে শুধু পাশ করলেই হবে না, আসন সংখ্যার মধ্যে তাকে মেধা তালিকায় স্থান মিলবে। না হলেও ওই পাশ মার্কস পেয়ে ওই শিক্ষার্থীর কোন লাভই হবে না।

গত ৫ বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন্ ইউনিটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা দেখা যায় সংখ্যায় এবং শতকরা হিসেবে সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী পাশ করেছে চারুকলা অনুষদে(চ ইউনিট)। গত বছর এ ইউনিটে ১৩৫ আসনের বিপরীতে পাশ করে ২০৮ জন শিক্ষার্থী, শতকরা হিসেব যা মাত্র ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। পাশের এই হার দেখে যে কারও চোখ চড়খ গাছ হতে পারে। কিন্তু আসনের বিপরীতে এই সংখ্যা কিন্তু মোটেই অপ্রতুল নয়। যে সংখ্যক শিক্ষার্থী পাশ করেছেন তাদের মধ্য থেকেও ৭৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাননি।

চলতি বছরে গ ও খ দুটি ইউনিটের ফল প্রকাশ করা করা হয়েছে। পাশের হার যথাক্রমে ১৪.৭৫ শতাংশ এবং ১৬.৫৬ শতাংশ। কিন্তু আসন সংখ্যার বিচারে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুনেরও বেশি। গ ইউনিটে মোট ১ হাজার ২৫০ টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ১৬৮ জন এবং খ ইউনিটে  মোট দুই হাজার ৩৬৩টি আসনের বিপরীতে পাশ করেছে ৫ হাজার ১৮৮ জন। অর্থাৎ পাশের হার এত কম থাকলেও উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে গ ইউনিটে প্রায় তিন হাজার এবং খ ইউনিটে প্রায় সমান সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন না।

গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোনায় আসে ২০১৪ সালের খ ইউনিটের ফল প্রকাশের পর। ওই পরীক্ষায় ইংরেজি বিভাগে ভর্তির যে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তা পুরণ করে ১৩২ আসনের মধ্যে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হন মাত্র দুই জন শিক্ষার্থী। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শর্ত শিথিল করে আসন পুরণের ব্যবস্থা করে।

ভর্তি পরীক্ষায় এত কমসংখ্যক শিক্ষার্থী পাশ করা নিয়ে একাধিকবার সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিন বলতেন, আমরা পরীক্ষাই নেই কত শিক্ষার্থীকে বাদ দেওয়া যায় সেটা বিবেচনায় নিয়ে। কারণ আমাদের আসন সংখ্যা সীমিত। তাই বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাশ করালেও তাদেরতো কোন লাভ নেই। তাছাড়া যত সংখ্যক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয় তাদের অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থীকে আমরা ভর্তি করাতে পারি না, কেবল আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে।

সোমবার খ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কম সংখ্যক শিক্ষার্থী উত্তির্ণ হওয়ার ব্যাপারে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমাদের যত আসন তার আড়াই গুন বেশি শিক্ষার্থী পাশ করেছে। সুতরাং পাশের হারে তো ভর্তির ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই।

সুতরাং এই পাশের হার নিয়ে এত আলোচনা বা সংবাদের শিরোনাম হওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশ সময় : ০০১২ ঘণ্টা, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ

Scroll to Top