পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ এক অনন্য রাষ্ট্র, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনন্য নেতা। অনেকে বলছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধী সং সান সু চি কে দেয়া নোবেল পুরস্কার শেখ হাসিনাকে দেয়া হোক। একজন গণহত্যাকারীর সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর তুলনা হতে পারে না কোনোভাবেই। সু চির প্রত্যক্ষ নির্দেশ এবং যোগসাজশে এ পর্যন্ত হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে, দেশান্তরী হয়ে বাংলাদেশেই আশ্রয় নিয়েছে নতুন-পুরনো মিলে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। আর এদেরকে আশ্রয় দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। সবাই যেখানে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে নিজেদের স্বার্থ দেখছে, নোংরা রাজনীতি করছে, সেখানে শেখ হাসিনা নানা শঙ্কা থাকার পরেও শুধু মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়ে বসে আছেন। খালেদা জিয়াও দুইবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। লন্ডনে গিয়ে বসে আছেন বললে ভুল হবে। দেশের বড় বড় পত্রিকায় খবর এসেছে, খালেদা জিয়া লন্ডনে ছেলে-ছেলে বউ আর নাতনিদের সাথে দেখা করার নামে, চিকিৎসার নামে নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বললে প্রকৃত বিষয়টা পরিষ্কার হয় না। পত্রিকায় খবর এসেছে, পাকিস্তানের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর প্রতিনিধিদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করছেন সেখানে। আইএসআই যে যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ আর ইসরায়েলের মোসাদের সাথে মিলে আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামের ভুয়া একটি জঙ্গি সংগঠনের কনসেপ্ট ডেভেলাপ করেছে, তার খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। আইএসআই এর কর্মকর্তাদের সাথে ভুঁইফোঁড় আরসা’র এক লিডারের কথোপকথন রেকর্ড করেছে গোয়েন্দারা। সবচেয়ে বড় দলিল বিএনপি নিজেই। এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত খবরের কোনো প্রতিবাদ নজরে আসেনি। এতদিন গরম গরম কথা বললেও, বিএনপির মুখপাত্র নতুন করে বলতে শুরু করেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করতে চায় না।
এত কিছুর পরেও দেশের মানুষের একটা অংশ খালেদা জিয়াকে একটা কথাও বলবেন না। কারণ অন্ধ আনুগত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নির্দেশদাতা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আরোহণের পরে ইতিহাস বিকৃতির যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, এরা তারই ফসল। বন্যার সময় খালেদা জিয়া ছিলেন না, রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাশে খালেদা জিয়া নেই। তাহলে উনি থাকবেন কখন? খালেদা জিয়া বোধহয় ভাবছেন, লন্ডনে থেকে সব কাজ সেরে আসবেন। উনি সেখানে বসে, শুয়ে, আরামে ষড়যন্ত্র করে সময় কাটাবেন। আর দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে বড় কোনো সর্বনাশ হলে উনি এসে আবার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসবেন। বিএনপি-ছাত্রদলে অনেক মানুষ আছেন যারা দেশকে ভালোবাসেন, কাজ করতে চান, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু খালেদা জিয়ার মত স্বার্থপর, অন্ধকারের শক্তির সাথে হাত মেলানো ‘নেতৃত্ব’ নিয়ে এরা কী করবেন, ভেবে পাই না।
যাইহোক, প্রাসঙ্গিক বলে খালেদা জিয়া নিয়ে কিছু কথা বললাম। রোহিঙ্গা বা বন্যা ইস্যুতে খালেদা জিয়ার ভূমিকা প্রকৃত অর্থেই স্বার্থপরতার আকাশ ছুঁয়েছে। নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া আরেক নারী অং সান সূচি এ মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষের খেতাব পাওয়ার মত কাজ করছেন। ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে, ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে গিয়ে জগতের সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যাকে সাপোর্ট দিয়ে চলেছেন।
সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মানবিকতাকে সবার আগে স্থান দিয়ে নানা জাতীয় সীমাবদ্ধতা, সংকট থাকার পরও লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। কয়েক হাজার একর জায়গার উপর অস্থায়ী ঘর বানিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের বর্বর সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ অনেক রাষ্ট্রের অবস্থানে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। জাতিসংঘ নড়েচড়ে বসার লক্ষণ দেখাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি এই দুঃসময়ে ছুটে গেছেন ওআইসি সম্মেলনে। সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় মুসলিম দেশগুলোর সমর্থন চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। গত দুদিনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মন দিয়ে পড়ুন। যারা রোহিঙ্গারা মুসলিম বলে গণহত্যায় এতটুকু মন খারাপ করেন না, রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের যারা ডাইনি সু চির মুখে তোলে দিতে চান, বর্বর বর্মীদের কুড়ালে টুকরো টুকরো হতে দিতে চান, যারা রোহিঙ্গাদের এখনো সন্ত্রাসী বলে তৃপ্তিবোধ করেন, যারা নিজের সম্পদ-আরাম নষ্ট হবে বলে রোহিঙ্গা ইস্যু এড়িয়ে চলতে চান, যারা যুদ্ধ লাগার আগেই যুদ্ধ যুদ্ধ আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভয়ে গরম লেপের নিচে দেহ ঢাকছেন, তাদের কাছে অনুরোধ শেখ হাসিনার কথাগুলো হৃদয় দিয়ে না হোক, মগজ দিয়ে শুনুন।
রোহিঙ্গাদের সামনে গিয়ে শেখ হাসিনা বলছেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ঘর পোড়ানোর যন্ত্রণা অনুধাবন করতে পারি বলেই মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। যতটুকু পারি আশ্রিতাদের সহযোগিতা দেব। তবে বিশ্ববাসীকেও আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে এ ব্যাপারে জনমত গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি, ঘরবাড়ি হারিয়ে আপনারা যারা এখানে এসেছেন তারা সাময়িক আশ্রয় পাবেন। তবে আপনারা যেন নিজের দেশে ফিরে যেতে পারেন সে ব্যাপারে মিয়ানমারকে বলব। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের যেন কষ্ট না হয়, তাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে কেউ যেন ভাগ্য গড়তে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
মিয়ানমার এবং তাবৎ বিশ্বের নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তাতে কি তাদের বিবেককে নাড়া দেয় না? একজনের ভুলে এভাবে লাখ লাখ মানুষ ঘরহারা হচ্ছে। আমরা শান্তি চাই’।
এই হল আমাদের প্রধানমন্ত্রী। শারীরিক গড়নে সু চিও একজন নারী। একজন নারী হয়ে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণে মদদ দিচ্ছেন, শিশু হত্যায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কেমন মানুষ তুমি সু চি? তোমার শুভ্র চেহারা আর কানের ফাঁকে গুজে রাখা ফুল দেখে তো আমাদের মনে হয়নি যে, এত বড় গণহত্যায় তুমি নেতৃত্ব দিতে পার। চেহারাটা তোমার মানুষেরই, কিন্তু আসলে তুমি ডাইনি, আসলে তুমি রাক্ষস।
এই সু চির পুরস্কার শেখ হাসিনাকে দিতে বলছেন কেউ কেউ। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার তো আমাদের দেশেরও একজন মানুষ পেয়েছেন। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার যেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পকেটে চলে গেছে। না হলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ইসরায়েলের রক্ত লোলুপ নেতারা কীভাবে নোবেলে শান্তি পুরস্কার পান? শান্তিতে নোবেল যিনি পাবেন, তিনি কেমন করে দেশের কোনো দুর্যোগেই নিরব থাকতে পারেন? কোটি কোটি ডলার মার্কিন নির্বাচনে অনুদান দিতে পারেন, কিন্তু মজলুম রোহিঙ্গাদের জন্য একটা টাকা খরচ করতে পারেন না। কেমন শান্তিবাদী লোক আপনারা।
যে নোবেল সু চির মত নিষ্ঠুর মানুষ (?) পেয়েছে, সে পুরস্কার আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়ার আগে নোবেল কমিটিকে একশ বার ভাবতে হবে। পুরস্কার দিলেও শেখ হাসিনা নিবেন কি না, আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যে শান্তি পুরস্কারে মজলুমের রক্ত লেগে আছে, যে শান্তি পুরস্কারের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের কচুকাটা করা হচ্ছে, সে একই পুরস্কার আমাদের শেখ হাসিনাকে দেয়ার দরকার নেই। ১৬ কোটি মানুষের, বিশ্ব মজলুমের ভালোবাসার চেয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দেয়া একটি নোবেল পুরস্কার বড় হতে পারে না।
লেখক: শিক্ষক, সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭