ছাত্রলীগের সঙ্গে বেইমানি করবেন না

আমি আগেই বলে নিই যে আমি আসলে সম্মেলনের পক্ষে-বিপক্ষে লিখছি না। আমি লিখছি নিয়মের পক্ষে। আমি লিখছি ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের পক্ষে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে যখন মেয়াদ দুই বছর উল্লেখ আছে তখন এই গঠনতন্ত্রের সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর ইমানি দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যদি এক্ষেত্রে তাদের ইমানি দায়িত্বের প্রতি অবহেলা করে তাহলে তারা মুজিব আদর্শের সাথে বেইমানি করবে। আপনারা অনেকে হয়তো বলবেন, ছাত্রলীগের বিগত কয়েকটি কমিটিতে দুই বছরের মধ্যে কাউন্সিল হয় নাই তবে এই কমিটিতে কেন? এক্ষেত্রে বিষয়টা হলো গত কমিটিগুলোতে দুই বছর পর বিষয়টি এভাবে সামনে আসে নাই। এই কমিটিতে যখন সেটা প্রকাশ্যে সামনে আসছে তখন সে অনুযায়ী সম্মেলন না হলে ছাত্রলীগ ছাত্রসমাজের কাছে আস্থা হারাবে। তখন সাধারণ ছাত্ররা প্রশ্ন তুলবে যে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের জন্য বর্ণিত নিয়মই মানে না। তারা অন্য কোনো নিয়ম কীভাবে মানবে?

তাই সাধারণ ছাত্রদের কাছে আমাদের আস্থা বা ছাত্রলীগের পরিপূর্ণতা প্রমাণের জন্য যেমন বলি, ছাত্রলীগ একমাত্র সংগঠন যার গঠনতন্ত্র আছে। আমরা তার সাথে যোগ করে বলতে পারব, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র আছে শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগ তা মেনেও চলে। এখন আসি কয়েকজন বা কিছু মানুষ বলার চেষ্টা করছে , সামনে নির্বাচন এই নির্বাচনে ছাত্রলীগকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি। কিন্তু এমন তো না ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে শূন্যস্থান তৈরি করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হলে এই তারা নির্বাচন নিয়ে কাজ করবে। নতুন কমিটিতে তো ছাত্রলীগের এই কমিটির বা আওতাধীন নেতাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব আসবে। ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল হলে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব কিছু ক্ষেত্রে বহাল থেকে যেতে পারে। কিন্তু এটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারকে যারা সমর্থন করছে তারা মতান্তরে মুজিব আদর্শের সাথে বেইমানি করছে। বঙ্গবন্ধুর জীবদশায় এমনকি ৭০ এর নির্বাচনের আগেও ছাত্রলীগের সম্মেলন তার তৎকালীন মেয়াদ এক বছর মেনেই হয়েছিল। নির্বাচনের দোহাই দিয়ে তারা সম্মেলন ঠেকিয়ে রাখেননি।

আবার সাম্প্রতিক উদাহরণ দিলে বলা যায়, ২০০৬ সালে যখন লিয়াকত শিকদার ভাই ছাত্রলীগের সভাপতি এবং নজরুল ইসলাম বাবু ভাই সাধারণ সম্পাদকসহ তাদের কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ মিলে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে সম্মেলন দিয়ে দেন যার ছয় মাস এর মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। উনারা কিন্তু নির্বাচনের দোহাই দিয়ে সম্মেলন করতে চাননি এমন ছিল না। ওই কমিটি তার পুরোটা সময় বিরোধী দলে থেকে দায়িত্ব পালনের পরও নির্বাচন সামনে রেখে যখন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা সেই সময়ে তাদের দায়িত্ব হস্তান্তর করে। নির্বাচন এখনো দেড় বছরের মতো দেরি এই মুহূর্তে নতুন কমিটি করে দায়িত্ব হস্তান্তর করলে নতুন কমিটি পরিপক্ক হয়ে উঠবে। তাই নির্বাচনকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে সম্মেলন না করার প্রশ্ন অবান্তর।

এবার বলি, অনেকে আমাকে প্রশ্ন করে এখন কমিটি হলে কি নেতা হতে পারবেন? আমি বলি, আমি নেতা হওয়া না হওয়া এর সাথে সম্মেলনের কী সম্পর্ক?

– এখন তো যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আছেন। পরে যদি কিছু না হন?

– আমি তো হওয়ার জন্য সম্মেলন চাই না। চাই গঠনতন্ত্রের জন্য।

– গঠনতন্ত্র দেখে আপনার লাভ কী?

– গঠনতন্ত্র না মানলে কার লাভ হচ্ছে? আমি অন্য কারো লাভের অংকের হাতিয়ার হতে রাজনীতি করতে আসি নাই। যার বা যাদের লাভ হচ্ছে তাদের কী ধরনের লাভ হচ্ছে? তাদের গঠনতন্ত্র মানতে এতো অনীহা কেন? মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের সংবিধান যদি ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে হয় তাহলে ছাত্রলীগের সংবিধান বা গঠনতন্ত্র সরাসরি সতের হাজার নেতাকর্মীর এবং পরোক্ষাভাবে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। কেননা ছাত্রলীগের ইতিহাস মানে বাংলাদেশের ইতিহাস।  লেখক: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা

বাংলাদেশ সময় : ১৫৪০ ঘণ্টা, ৩১ আগস্ট, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ

Scroll to Top