শিক্ষক এবং শিক্ষকতা

ছোট শিশুদের স্কুল দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। সুযোগ পেলেই আমি এ রকম স্কুলে চলে যাই, শিশুদের সঙ্গে কথা বলি। শহরের শিশুদের চেহারা, ছবি, পোশাক এক রকম, গহিন গ্রামের একটা স্কুলের শিশুদের অন্যরকম, কিন্তু তাদের ভাবনা-চিন্তা মোটামুটি একই ধরনের। স্কুলের শিশুদের পেলেই আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, তোমরা বড় হয়ে কী হতে চাও? শিশুরা তখন একে-অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে, দেখেই বোঝা যায়—বড় হয়ে যে নিজের ইচ্ছামতো কিছু একটা হওয়া যায় ব্যাপারটা তারা জানেই না।

আমাকে তখন তাদের সাহায্য করতে হয়, আমি জিজ্ঞেস করি, ‘তোমরা কী বড় হয়ে ডাক্তার হবে নাকি ইঞ্জিনিয়ার হবে? নাকি বিজ্ঞানী কিংবা পাইলট কিংবা পুলিশ না র‌্যাব হবে? নাকি শিক্ষক কিংবা অফিসার হবে?’
শিশুরা তখন নড়েচড়ে বসে এবং একজন সাহস করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট এ রকম কিছু একটা বলে ফেলে এবং তখন দেখা যায় অন্য সবাইও সেই একই পেশায় যেতে চায়। আমি এখন পর্যন্ত অনেক শিশুর সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা অনেক কিছু হতে চেয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে বলতে শুনিনি সে বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায়।

আমি শিশুদের একটুও দোষ দিই না। তাদের জন্য স্কুল কখনই আনন্দময় একটা জায়গা নয় এবং সেই স্কুলের দায়িত্বে যে শিক্ষকরা থাকেন সম্ভবত তাদের নিয়ে শিশুদের কোনো সুখস্মৃতি নেই। কিংবা তারা হয়তো দেখেছে একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা পুলিশ অফিসার অনেক দাপটেই থাকে, তাদের তুলনায় একজন শিক্ষক থাকেন খুবই দুর্বলভাবে কিংবা দীনহীনভাবে তাই বড় হয়ে তারা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে না।

আমি আমার নিজেকে দিয়েও বিষয়টা চিন্তা করে দেখেছি। ছাত্রজীবনে আমি যে ধরনের শিক্ষকদের দেখেছি তাদের কথা মনে করতে চাইলে বিভীষিকাময় নিষ্ঠুরতা শিক্ষকদের কথা আগে মনে পড়ে। তাদের নিয়ে আতঙ্কের বিষয়টা এতই ব্যাপকভাবে আসে যে, অন্য দু-চারজন ভালো শিক্ষকের স্মৃতি ঢাকা পড়ে যায়। তাদের মিষ্টি করে বলা কোনো কথা মনে নেই কিন্তু যতবার তাদের হাতে মার খেয়েছি প্রত্যেকটা ঘটনার কথা স্পষ্ট মনে আছে। শারীরিক যন্ত্রণার কথা ভুলে যাওয়া যায় কিন্তু অপমানটার কথা কখনো ভোলা যায় না।

আমাদের দেশে আইন করে স্কুলে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার বিষয়টা তুলে দেওয়া হয়েছে। এটি অনেক বড় ঘটনা, যদিও আমরা এখনো পত্রপত্রিকায় স্কুল, মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রী পেটানোর ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা মাঝে মাঝেই শুনতে পাই।

এ ব্যাপারে আমার নিজেরও ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের ইউনিভার্সিটির যে স্কুল, আমি তখন তার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। হঠাৎ একদিন আমার কানে এলো কোনো একজন ছাত্রীর গায়ে কোনো একজন শিক্ষক হাত তুলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই আমি খুব বিচলিত হয়ে পরদিন সেই ক্লাসে হাজির হয়েছি। যে শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ক্লাসে ঢুকে শিক্ষককে কিছুক্ষণের জন্য আমাকে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিরিবিলি কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।

শিক্ষক বাইরে চলে গেলে আমি দরজা বন্ধ করে তাদের কাছে জানতে চাইলাম, সত্যি সত্যি কোনো শিক্ষক তাদের গায়ে হাত তুলেছেন কিনা। প্রথমে সবাই মাথা নিচু করে নিঃশব্দে বসে রইল। খানিকক্ষণ অভয় দেওয়ার পর তারা মুখ খুলল এবং জানতে পারলাম সত্যি সত্যি এ ধরনের ব্যাপার ঘটছে। আমাদের স্কুলজীবনে শিক্ষকরা ছাত্রদের পেটানোর জন্য লম্বা বেত হাতে নিয়ে ক্লাসে ঢুকতেন। এখন সেটি সম্ভব নয়। তাই ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তোলার জন্য কোনো একটা শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করতে হয়। এই ক্লাসে ধাতব রুলার দিয়ে একাধিক ছাত্রীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই আমি যথেষ্ট বিচলিত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের বললাম, দেশে আইন হয়েছে শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তুলতে পারবেন না। কাজেই যদি কোনো শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তুলে থাকেন তা হলে তিনি দেশের আইন ভঙ্গ করেছেন। দেশের আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি হয় তাই সেই শিক্ষকেরও শাস্তি পাওয়ার কথা।
চুরি, ডাকাতি, খুন যে রকম অপরাধ ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তোলাও সে রকম অপরাধ। কাজেই যদি ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা ঘটে তা হলে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকের সঙ্গে কোনো বেয়াদবি না করে যেন শাস্তিটুকু সহ্য করে। তার পর স্কুল ছুটির পর আমার অফিসে এসে যেন আমাকে ঘটনাটা জানায়।

আমি কথা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ক্লাস এমনভাবে আনন্দধ্বনি করে উঠল যে, আমি খুব অবাক হলাম এবং আমার মনে হলো হয়তো এ রকম ঘটনা স্কুলে নিয়মিতভাবে ঘটছে। আমার তখন মনে হলো যে, হয়তো অন্যান্য ক্লাসে গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের একই কথা বলে আসা উচিত।

আমি তাই একটি একটি করে প্রত্যেকটি ক্লাসে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বলে এলাম, তাদের গায়ে হাত তোলা দেশের আইনে অপরাধ এবং যদি তাদের ওপর এই অপরাধ করা হয় তা হলে যেন সেটি আমাকে জানানো হয়। প্রত্যেকটা ক্লাসেই আমি বিশাল আনন্দধ্বনি শুনতে পেলাম।

শুধু ছাত্রছাত্রীদের বলেই আমি শেষ করে দিলাম না, আমি সব শিক্ষককে ডেকে তাদের বললাম, তারা কোনো অবস্থাতেই কোনো ছাত্রছাত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারবেন না।

তার পর স্কুলে যেটা ঘটল আমি সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। কয়েকদিন পর খবর পেলাম পুরো স্কুলে শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই, ছাত্রীরা চেঁচামেচি-চিৎকার করে সময় কাটায়, শিক্ষকরা ক্লাসে উদাস মুখে বসে থেকে ছাত্রছাত্রীদের নরক গুলজার করতে দেন। হেডমাস্টার শিক্ষকদের ক্লাসের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললে তারা মুখ ভার করে আমার কথা বলে, আমি নাকি তাদের বলেছি, ছাত্রছাত্রীদের কিছু বলা যাবে না, তাই তারা কিছু বলেন না।

এই বয়সের ছেলেমেয়েদের ক্লাসে পুরো স্বাধীনতা দিয়ে দিলে তারা কী তুলকালাম কাণ্ড করতে পারে সেটা অনুমান করা কঠিন নয়। শিশুদের চিৎকার-চেঁচামেচির কারণে স্কুলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় না, সব শুনে আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। অনেক কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থার সামাল দিতে হয়েছিল।
কিছুদিন আগে আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছে, আপনার বেশ কয়েকটি পরিচয় আছে, লেখালেখি করেন, গবেষণা করেন, শিক্ষকতা করেন, কখনো কখনো নানারকম আন্দোলনও করেছেন। আপনার কোন পরিচয়টিতে আপনি পরিচিত হতে চান? আমি এক মুহূর্ত দ্বিধা না করে বলেছি, আমি শিক্ষক পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই।

আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করে দেখেছি শিক্ষকতা না হয়ে অন্য কোন পেশায় যোগ দিলে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম, একটাও খুঁজে পাইনি। আমার ধারণা, আমার মতো যারা শিক্ষক, সেটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকই হোক আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই হোক সবাই আমার কথায় সায় দেবেন।

তার কারণ আমরা যারা শিক্ষক তারা সত্যিকারের মানুষ নিয়ে কাজ করি, আমরা প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের পড়াই, পড়তে না চাইলে ভয়ভীতি দেখাই, তারা ভালো কিছু করলে খুশিতে আটখানা হয়ে যাই, তারা ভুল করলে লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। একদল ছাত্র পাস করে বের হয়ে যায় তখন অন্য একদল ছাত্র এসে ঢুকে।

দেশে-বিদেশে হঠাৎ হঠাৎ একজনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, যে বলে স্যার আমি আপনার ছাত্র।’হয়তো পাশে তার স্ত্রী দাঁড়িয়ে থাকে, কোলে শিশুসন্তান। যে ছাত্রটি প্রায় কিশোর হিসেবে একদিন পড়তে এসেছিল এখন সে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে, দেখে কী ভালোই না লাগে। শুধু আমরা শিক্ষকরা, সেই আনন্দটুকু পেতে পারি, আমার মনে হয় না অন্য কোনো পেশার কোনো মানুষ কোনোদিন আমাদের এই আনন্দটুকু উপভোগ করতে পারবে।

তবে লেখাপড়ার জগতে একটা মৌলিক পরিবর্তন হচ্ছে, যেটা আমরা নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি। একটি সময় ছিল যখন একটি সার্টিফিকেট খুব একটা মূল্যবান বিষয় ছিল। সেই সার্টিফিকেটটি কোন বিষয়ের সার্টিফিকেট সেটা নিয়েও মানুষজন মাথা ঘামাত। শুধু তাই নয়, ছাত্র বা ছাত্রীটি কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটটি এনেছে সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

ধীরে ধীরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে যাচাই করার একটিমাত্র মাপকাঠি, সেটি হচ্ছে তার যে বিষয়টুকু জানার কথা সে কী সেটা জানে, নাকি জানে না? কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিতে পারেনি, হাতে কোনো সার্টিফিকেট নেই কিন্তু পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে এ রকম উদাহরণের এখন আর অভাব নেই।

কাজেই আমাদের শিক্ষকদের একটি নতুন দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো, নতুন পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে একটি চকচকে সার্টিফিকেট যথেষ্ট নয়। একটি ছাত্রকে যেটি জানার কথা সেটি জানতে হবে। তার চেয়ে বড় কথা একশ বিলিওন নিউরন দিয়ে তৈরি মস্তিষ্ক নামের অমূল্য সম্পদকে ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে শানিত করে রাখতে হবে। যখন প্রয়োজন হবে তখন যেন সেটাকে ব্যবহার করা যায়। মুখস্থ করে কিংবা কোচিং ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থী না হয়ে শুধু পরীক্ষার্থী হওয়ার ট্রেনিং নিয়ে তারা যেন নিজেদের মস্তিষ্কটি ভোঁতা করে না ফেলে।

আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়াই তারা সবাই একটা বিষয় লক্ষ করেছি। কয়েক বছর থেকে ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমে আসছে। অনেক সময়ই মনে হয়, পড়ানোর সময় আমি যেটা বলছি ছাত্রছাত্রীরা সেটা শুনছে কিন্তু বোঝার জন্য মস্তিষ্ককে ব্যবহার করতে তাদের ভেতর এক ধরনের অনীহা, এক ধরনের আলস্য।

এ নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি, আমার কাছে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই কিন্তু আমার মনে হয় এটি হচ্ছে ফেসবুকজাতীয় সামাজিক নেটওয়ার্কে বাড়াবাড়ি আসক্তির ফল। এটি নিশ্চয়ই শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়, সারা পৃথিবীর সমস্যা। আমি একাধিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখেছি মাদকে আসক্তি এবং ফেসবুকে আসক্তির মাঝে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।

তবে এ কথাটিও সত্যি, সারা পৃথিবীতেই সব মানুষ দাবি করে এসেছেন, তাদের সময়ে তরুণ সমাজ অনেক ভালো ছিল এবং নতুন প্রজন্মের হাজারো সমস্যা! আমি নিশ্চিত, এখন যে তরুণ প্রজন্মের সমালোচনা করছি তারা যখন বড় হবে তখন তারাও নতুন প্রজন্মের সমালোচনা করে হতাশা প্রকাশ করবে! কাজেই আমরা যাদের পেয়েছি তাদের নিয়ে অভিযোগ না করে যেটুকু এগোতে পারি সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাই।

তবে এ কথা সত্যি, শিক্ষকতা জীবন নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। শিক্ষক হিসেবে আমি খুব সফল নই, আমি জানি আমার ছাত্রছাত্রীরা আমাকে যমের মতো ভয় পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট বড় এবং তাদের পূর্ণবয়স্ক মানুষের মতো বিবেচনা করা উচিত, ক্লাসের বাইরে আমি সেটা করি কিন্তু ক্লাসের ভেতরে আমি তাদের প্রায় কিন্ডারগার্টেনের শিশুর মতো নজরদারি করি।

কোনোরকম ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ একদিন ক্লাসে আমি যখন পরীক্ষা নিয়ে ফেলি তখন তারা নিশ্চয়ই আমার ওপর খুব বিরক্ত হয়। শুধু তাই নয়, আমি ক্লাসে ছেলেমেয়েদের প্রশ্ন করে করে ক্রমাগত উৎপাত করি। আমার ক্লাসে ছেলেমেয়েরা নিশ্চয়ই শান্তিতে বসতে পারে না, তাই যদি আমাকে যমের মতো ভয় পায় তাদের দোষ দেওয়া যাবে না।

ক্লাসে ছাত্রদের প্রশ্ন করা নিয়ে একটা ঘটনার কথা বলে শেষ করে দিই। ক্লাসে পড়াতে পড়াতে একদিন একটা ছাত্রকে খুব সোজা একটা প্রশ্ন করেছি, ছাত্রটি প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারল না। আমি খুবই বিরক্ত হয়ে পরের জনকে একই প্রশ্ন করেছি, সেও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না। আমি তখন রীতিমতো রেগে উঠে পরের জনকে প্রশ্ন করলাম সেও উত্তর দিতে পারল না।

তখন আমি একজন একজন করে সবাইকে প্রশ্ন করতে শুরু করেছি, তারা কেউ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না এবং আমি ধীরে ধীরে রেগে উঠতে শুরু করেছি।

একজন একজন করে যখন আমি একেবারে শেষ ছাত্রটির কাছে পৌঁছালাম এবং সেও আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না তখন আমার সব রাগ গিয়ে পড়ল সেই ছেলেটির ওপর। তাকে প্রচণ্ড বকাঝকা করে যখন শেষ করেছি তখন ছেলেটি খুবই করুণ গলায় বলল, ‘স্যার আমি আসলে এই ইউনিভার্সিটির ছাত্র নই। আমি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে পড়ি। আপনি কীভাবে ক্লাস নেন সেটা দেখার জন্য এসেছিলাম।’

পুরো ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়ল এবং আমার সব রাগ মুহূর্তের মধ্যে পানি হয়ে গেল।
শিক্ষকতা জীবনের এ রকম টুকরো টুকরো ঘটনার শেষ নেই এবং আমার ধারণা শুধু একজন শিক্ষকের জীবনেই এ রকম ঘটনা ঘটা সম্ভব। কারণ আমরা ফাইল নিয়ে কাজ করি না, যন্ত্র নিয়ে কাজ করি না, আমরা কাজ করি রক্ত-মাংসের মানুষ নিয়ে। যাদের চোখে রঙিন চশমা এবং যারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে!

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, ২০ অক্টোবর    ২০১৭

Scroll to Top