আর কখনোই ফিরবে না স্বাভাবিক অর্থনীতি

মহামারী করোনার কারণে বিশ্ব আজ বলতে গেলে অবরুদ্ধ। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ভেঙে পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা, স্থবির অর্থনীতির চাকা। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে পরিবহন-যোগাযাগ বন্ধ। এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যায় না, যেতে পারেও না। এমনকি পাশের বাড়ি কিংবা পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও আসা-যাওয়া নিষেধ। সব মিলিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় বিশ্বজুড়ে থমকে গেছে মানবজীবন।

তবে এটিই শেষ কথা নয়। করোনার এই পরিস্থিতি থেকে একদিন মুক্তি পাবে পৃথিবী। তখন কেমন হবে বৈশ্বিক অর্থনীতির চালচিত্র? অর্থনীতির বিশ্বখ্যাত বিশ্লেষক শুনিয়েছেন আশার কথা, ভয়াবহ এই মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে চিরতরে বদলে দেবে। স্থায়ী পরিবর্তন ঘটবে রাজনীতিরও। অভিমতগুলো নিয়েছে ফরেন পলিসি ডটকম।

লকডাউন শুরু হলে দুনিয়াজুড়ে সবাই এর তুলনা খোঁজা শুরু করেন ১৯১৪, ১৯২৯, ১৯৪১ ইত্যাদি। তখন হলো কি, এই পরিস্থিতি যে ঐতিহাসিকভাবে মহত্ত্বপূর্ণ, সেই ব্যাপারটা প্রতিভাত হয়। পৃথিবীতে নতুন কিছু হচ্ছে, ব্যাপারটা ভয়াবহ।

অর্থনৈতিক পরিণতি আমাদের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিচ্ছে। অনেক দেশই অর্থনীতিতে বড়সড় ধাক্কা খাচ্ছে, যে অভিজ্ঞতা আগে তাদের হয়নি। খুচরা বিক্রয় খাত এমনিতেই অনলাইনের উত্থানে ভীষণ ধাক্কা খেয়েছে। আর এই সাময়িক লকডাউন হয়তো তাদের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দেবে। অনেক দোকানই আর খুলবে না, তারা চিরতরে হারিয়ে যাবে। কোটি কোটি শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও তাঁদের পরিবার বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। এই লকডাউন যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির ক্ষত ততই গভীর হবে। এতে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতিও কমবে।

অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স সম্পর্কে আমরা যা জানতাম, তার খোলনলচে বদলে গেছে। প্রথাগত ধারণায় আঘাত লেগেছে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর থেকে আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিতবহ অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করতে হবে, এ নিয়ে তো অনেক কথা হলো। এখন আমরা প্রকৃত অর্থেই জানি, আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিতবহ অনিশ্চয়তা কী জিনিস।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমরা এখন রাজস্ব খাতে বিশ্বের বৃহত্তম ও সমন্বিত উদ্যোগ দেখছি। কিন্তু ইতিমধ্যে এটাও পরিষ্কার হয়ে গেছে যে প্রথম দফায় যা হলো, তা যথেষ্ট নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অভূতপূর্ব ক্ষিপ্রতা দেখাচ্ছে, তা নিয়ে ভ্রমের অবকাশ নেই। এই পুঞ্জীভূত দায়ের সমস্যা মোকাবিলায় ইতিহাস নানা ধরনের বিকল্পের সন্ধান দেয়, যেমন ব্যাপক মূল্যস্ফীতি অথবা সরকারের বাজেট ঘাটতি।

এখন ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবারগুলো ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করলে স্থবিরতা শুধু বাড়বেই। সংকটে আবার ঋণের বোঝা বাড়বে। কিন্তু সরকার যদি তাতে কৃচ্ছ্রসাধনের চেষ্টা করে, তাহলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। সে জন্য এই সংকট থেকে বেরোতে এখন আরও সক্রিয় ও দূরদর্শী সরকার প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তা কোন রূপে হবে এবং কোন রাজনৈতিক শক্তি তা নিয়ন্ত্রণ করবে।

অ্যাডাম টুজ: যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক।
:প্রথম আলো