সুদীপ অধিকারী
দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল একজোড়া কপোত-কপোতি গাছের আড়ালে বসে আছেন। একজনের কাঁধে অন্যজনের মাথা। বিড়বিড় করে কথা বলছেন। পাশ দিয়ে পথচারীরা যাচ্ছেন। সেদিকে তাদের ভ্রূক্ষেপ নেই। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই প্রশ্ন- কি চান? পাল্টা প্রশ্ন- কি করছেন এখানে? উত্তর এলো- না কিছু না। দু’জন গল্প করছিলাম। একজনের নাম রনি। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ছাত্র। অন্যজন আঁখি। রাজধানীর মুগদাপাড়ায় দু’জনের বাসা। একই মহল্লায় থাকার সুবাদে দু’জনের মধ্যে গড়ে উঠে সম্পর্ক। আঁখিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
রনি বলেন, সময়-সুযোগ পেলে দু’জনে মিলে ঘুরতে আসি। ভাববিনিময় করি। গত বুধবার রমনা পার্কে কথা হয় তাদের সঙ্গে। শুধু রনি-আঁখি জুটি নন। এখন একাধিক জুটিকে দেখা গেছে বসে গল্প করতে। এর মধ্যে কেউ কেউ যেমন ছিলেন শালীন তেমন অনেককে দেখা গেছে অশালীন। এক কপোত-কপেতিকে দেখা গেছে একেবারেই বেহায়াপনায় লিপ্ত। প্রেমিকের উরুতে বসে আছে প্রেমিকা। কাছে যেতেই ক্ষেপে যান। বেহায়াপনার প্রসঙ্গ আনতেই বলেন, আপনি তো দেখছি ব্যাকডেটেট। নিজেকে আধুনিকতার সঙ্গে খাপ খাওয়ান। দেখবেন সামনে সব ফকফকা।
অথচ রমনা পার্কে ঢুকতেই চোখে পড়ে গেটে ঝোলানো সাইনবোর্ড। তাতে লেখা- ‘পার্কের মধ্যে কোনো অনৈতিক কার্যকালাপ করা নিষিদ্ধ’। গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলেই দেখা গেছে অনেক মানুষের আনাগোনা। চারপাশে গাছগাছালি, লেক, পার্কজুড়ে রয়েছে বেশকিছু স্থায়ী বসার বেঞ্চ। কয়েকটা বাদে প্রায় সবগুলো বেঞ্চেই বসে আছেন তরুণ-তরুণীরা। শুধু স্থায়ী বেঞ্চ নয়, গাছের নিচে, ঘাসের ওপরে অনেকে বসে আছেন। তারা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। অনেকেই পূর্ব-নির্ধারিত সময় হিসেবে নিজের মানুষ নিজের বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন রমনায়। ঢাকায় এসে আবার অনেকে ঘুরতেও এসেছেন। আর এই সব মানুষকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একদল ফেরিওয়ালা ব্যবসায়ী। পার্কে ঘুরতে আসা মানুষের জন্য কেউ পানি, বিভিন্ন ধরনের চিপ্স, কোল্ড ড্রিংকস, আমড়াসহ বিভিন্ন জিনিস ফেরি করে বিক্রি করে বেড়ায় পার্কের ভেতর।
ঘুরতে আসা মানুষকে পুঁজি করে বেশকিছু ভিক্ষুককেও দেখা গেছে এখানে। রফিক নামের একজন ফেরিওয়ালা জানান, বিকাল থেকে শুরু করে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত পার্কে ভিড় থাকে বেশি । তখন ঘুরতে আসা মানুষগুলোর বেশির ভাগই দেখা মেলে বিভিন্ন গাছের আড়াল-আবডালে। তাদের মধ্যে অনেকে কিছু অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত থাকে। দিনের বেলায় ঘুরতে আসা মনুষগুলোর মধ্যেও কিছু ছেলে-মেয়েদের দেখা যায় লাশ-শরম বাদ দিয়ে সকলের সামনেই বেহায়াপনা করতে। কেউ কেউ এমন কিছু কাজ করে যে তাদের লজ্জা না লাগলেও তাদের পাশ দিয়ে যারা চলাচল করে তারা লজ্জা পান।
পার্কে ঘুরতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, প্রকৃতির সুন্দরের টানে সবুজে ঘেরা এই রমনায় ঘুরতে আসি, তবে পার্কে আসা কিছু মানুষ মাঝে-মধ্যে যেসব কাজকর্ম করে তাতে নিজেদেরই এখানে আসতে ইতস্তবোধ হয়। এক ছাত্রীকে প্রশ্ন করলে জানায়, বন্ধুর সঙ্গে এখানে ঘুরতে এসেছে সে । যেখানেই চোখ যায় শুধু দেখা যায় জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে সব তরণ-তরুণীর দল। যেন যুগলের মেলা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, ০৩ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/সাদ