তপন মাহমুদ লিমন
গ্রামদেশে যারা থেকেছেন বা যাতায়াত আছে, তারা জানেন, রাতে যখন একটা শেয়াল ডেকে ওঠে, তখন অন্য শেয়ালগুলো সাথে গলা মেলায়। আমি শুনতাম, অনেকক্ষণ ডেকে যেত তারা। মাঝে মাঝে তাদের ডাক থেমে গেলে আমরা দুষ্টমি করে ওদের মত করে একটা ডাক দিলে, ওরা আবার হুক্কাহুয়া করে উঠতো।
ইদানিং আমাদের সাংবাদিকতায় এমন হুক্কাহুয়া প্রবণতা শুরু হয়েছে। একজন একটা খবর ছাপালো, ব্যাস! আগ-পাশ না ভেবে সবাই অনুরণন করতে শুরু করে দেন। খ্যাত অখ্যাত কেউ বাদ যান না। অল্প দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই ট্রেন্ডে ঢুকে পড়েন। অথচ একটু কষ্ট করে খবরটা বা কোন বক্তব্য যা নিয়ে সংবাদ করছেন, সেটা মিলিয়ে নিতে পারেন। আর মেলানোর পরও যারা দুদক চেয়ারম্যানের ’কৃতকর্ম’ শব্দকে ‘দূর্নীতি’ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেন, কোন ব্যাখ্যা ছাড়া তারা অপ-সাংবাদিকতা বৈ কিছুই করেন না। উপস্থিত সাংবাদিকরা ব্যাখা চেয়েছেন, তবে তারা কি এমন প্রশ্ন করেছেন যে, কৃতকর্ম বলতে কি বোঝাতে চান বা কোন ধরনের দূর্নীতি এই কৃতকর্মের আওয়তায় পড়বে? ইত্যাদি আরো আরো প্রশ্ন করার ছিল! হয়তো হয়েছে। সেটা তো আমাদের পক্ষে এপার থেকে বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু এটা সাংবাদিকেদেরই দায়িত্ব সব বুঝে, সঠিক সংবাদটা প্রকাশ করা। কারণ তাদের দেয়া ভুল খবর যেমন সাংবাদিকতার মান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তুলতে পারে, তেমনি তাদের গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনাস্থা তৈরি করবে।
আনেকটি বিষয় হল, অনলাইনের যুগে, যে বিশেষ প্রচলন শুরু হয়েছে, তা হলো কপি পেস্ট! ঠিক ’ধর তক্তা মার পেরেক’ এর মত। ফলে এরকম চাঞ্চল্যকর খবর খুব দ্রতই ছড়িয়ে পড়ে। আর সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে এই খবর বাতাসেরও আগে ছড়ায়। স্ট্যটাসের বন্যায় ভেসে যায় ফেসবুক। আমরাও খুব ’সরল বিশ্বাসে’ সে খবর নিয়ে কথা-বার্তা, হাসি ঠাট্টা, ট্রল করা শুরু করি। যদিও বড় বড় গণমাধ্যমও যখন কৃতকর্ম শব্দটিকে দূর্নীতি বলে চালিয়ে দেয়, তাহলে সাধারণ আম-জনতার আর কি করার থাকে? যদিও পরে অনেকে সংশোধন করেছেন। কিন্তু যা ঘটার তো ঘটেই যায় ততক্ষণে।
সো, নো হুক্কাহুয়া ! আগে খবরের/ তথ্যের সঠিকতা নিশিচত করুন নিজ জ্ঞানে! সন্দেহ হলে ক্রসচেক করুন! আর যাদের সন্দেহ করার রোগটা নেই, তারা ভিন্ন পথ খুঁজুন !