এ কেমন অমানবিকতা!

দুই পা লোহার শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ, কোমরে রশি বেঁধে গাছের সাথে টানা চারদিন বেঁধে রাখা হলো বজোরে বিশ্বাসকে (৪০)। একটি ছেঁড়া জিন্সের প্যান্ট ও টি শার্ট পরিহিত অবস্থায় দিনের প্রচণ্ড তাপদাহ আবার রাতভর মশার কামড় সহ্য করতে হয়েছে তাকে। তার উপর গত কয়েকদিন হাটহাজারীতে গভীর রাতে বিকট শব্দে বজ্রপাতে মানুষ যখন নিজেদেরকে ঘরে আত্মরক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে সেখানেও বজোরে বিশ্বাসের আত্ম-চিৎকার শুনে কেউ রক্ষা করতে আসেনি।

শুধুই কি তাই, লাগাতার বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে পালাতে গিয়ে শিকল বাঁধা পা দু\’টো রক্তাক্ত হয়ে ফুলে গেছে। তাকে পেটানোও হয়েছে অনেক। রক্তাক্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খাবার দেওয়া হয়েছে অনেকটা কুকুরকে খাবার দেওয়ার মতো করে। নিষ্ঠুর পৃথিবীতে যেনো তাকে দেখার কেউ নেই। পায়খানা ও পেশাব উভয়টাই সেরেছে একই কাপড়ে। গ্যাসের পাইপ ফিটার মিস্ত্রি বজোরে বিশ্বাস এক মেয়ে ও ছেলের জনক। বাড়ি রাউজান উপজেলায় হলেও প্রায় ২০বছর ধরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভাধীন আদর্শ গ্রামে বসবাস করে। স্ত্রী\’র মৃত্যু হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর আগে। তিন ভাই ও বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে তিনি তিনবার মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছেন। কয়েকমাস ভালো থাকলেও যখনই মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তখন পরিবারের সদস্যরা তাকে চিকিৎসা দেওয়ার পরিবর্তে মারধরের মতো অমানুষিক নির্যাতন করে বেঁধে রাখেন।

\"\"

বরাবরের মতো এবারও তার উপর নির্যাতন চলছিল। রোমহর্ষক এমন সংবাদ পেয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার উননেছা শিউলী বৃহস্পতিবার দুপুরে বজোরে বিশ্বাসকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেন। এসময় তালাবদ্ধ বজোরে বিশ্বাসের ঘরে পরিবারের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। ইউএনও বজোরে বিশ্বাসের সাথে কথা বলেন। তিনি অকপটে ইউএনও\’র কথাগুলো উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন। দেখলে মনে হবে না তিনি সম্পূর্ণরূপে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। ইউএনও তাকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে পাঠিয়ে দেন হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. শেখ ফজলে রাব্বির কাছে। ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, তাকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত খাবার না খাওয়ার কারণে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে।

\"\"

ইউএনও আক্তার উননেছা শিউলী বলেন, বজোরেকে চরম অমানবিকতার সাথে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। কেনো তার পরিবার এমনটা করলো বোধগম্য হচ্ছে না। তার চিকিৎসার দরকার রয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি

Scroll to Top