ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিপথ বিশ্লেষণে বিশিষ্ট আবহাওয়াবিদ বলছেন, রোববার (১৪ মে) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে তা স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে। এতে এ দুই জেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আজ শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকা ১৫ থেকে ২৫ ফুট উচ্চ বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রাম উপকূলে প্রায় ১২ থেকে ১৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া দফতর রাতে সর্বশেষ বুলেটিনে জানায়- অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অবজারভেশন টিম আরও জানায়, মোখা কক্সবাজার জেলা ও মিয়ানমার উপকূলে প্রায় ১৮০ থেকে ২১৫ কিলোমিটার দমকা বা ঝড়ো বাতাসের প্রাবল্যতাসহ আঘাত হানতে পারে। এ সময় ঝড়ের শক্তির বাতাস প্রায় ২০০-২৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে বিস্তৃত থাকতে পারে। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলায় সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছে ওয়েদার অবজারভেশন টিম।
অবজারভেশন টিমের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানলে টেকনাফ ও কক্সবাজার এলাকা প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। একইসঙ্গে বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলেও যথেষ্ট ঝড়ো বাতাস বয়ে যাবে।
ঝড়ে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকাসহ বরিশাল বিভাগের ভোলা ও পটুয়াখালী এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
এ অবস্থায় জান-মালের নিরাপত্তায় ১৪ তারিখ সকালের মধ্যে উপকূলের লোকদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সংস্থাটি।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল ভারী বর্ষণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। উক্ত এলাকাসমূহে যেসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছে তাদের বিষয়ে অধিক সতর্কতার কথা বলেছে সংস্থাটি।
আবহাওয়া দফতর কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।
এছাড়া উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।