ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ হত্যার বিচার চেয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে খোলাচিঠি লিখেছেন নিহতের বড় বোন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা। খোলা চিঠিতে দিয়াজকে উদ্ধৃত করে নিপা লিখেছেন, ‘নাসির ভাইয়ের সাথে তর্ক করবেন না, সব জিরো হয়ে যাবে। নাসির ভাই যা বলে মেনে নেন।’
মঙ্গলবার রাতে নিজের ফেইসবুক পাতায় এক পোস্টের মাধ্যমে এই খোলাচিঠি প্রকাশ করেছেন দিয়াজের বোন। জুবাইদা তার চিঠিতে সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে ‘নেতা’ সম্বোধন করেন এবং দিয়াজ হত্যার আগের ও পরের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন।
জুবাইদা লিখেছেন, ‘দিয়াজ আর আমাদের আপনি ডেকেছিলেন কথা বলার জন্য, যেদিন দিয়াজকে বলেছিলেন তুমি ওপেন ঘুড়তে পারবে, ক্যাম্পাসে যেতে পারবে, দিয়াজের মা আমার মা, দিয়াজ সোনার টুকরো ছেলে, যেদিন আপনি আলমগীর টিপুকে আমাদের ঘড় ভাংচুরের মামলা থেকে বাদ দিতে বলেছেন, যেদিন আপনি কথা দিয়েছিলেন আমার দিয়াজের সার্টিফিকেট, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া আমার মায়ের সব সম্পদ উদ্ধার করে দিবেন, সেদিন দিয়াজ আপনার ড্রয়িংরুমে বসে ভিতরের রুমে আমাকে বারবার এসএমএস করছিল- ‘নাসির ভাইয়ের সাথে তর্ক করবেন না, সব জিরো হয়ে যাবে। নাসির ভাই যা বলে মেনে নেন’।’
জুবাঈদা লেখেন, ‘আমরা মেনে নিয়েছিলাম। তবে দিয়াজকে প্রশ্ন করার সুযোগ হয়নি কেন আপনার সব কথা আমাদের মানতে হবে। তার আগেই দিয়াজকে খুনিরা পরপারে পাঠিয়ে দিল।’
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেইট এলাকার বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর টিপু ও তার অনুসারীদের দায়ী করে দিয়াজের পরিবার। এর আগে একই বছরের ২৯ অক্টোবর দিয়াজসহ চার ছাত্রলীগ নেতার বাসায় ভাঙচুর চালায় প্রতিপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন কলা ভবন ও শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের দরপত্রকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিরোধে দিয়াজকে খুন করা হয় বলে দাবি তার অনুসারীদের। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী মামলা করেন। মামলার অন্যতম প্রধান আসামি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে টিপু এবং দিয়াজ দুজনই মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ফেইসবুকে দেওয়া খোলাচিঠির সঙ্গে গত বছরের ১ অক্টোবর দিয়াজের একটি ফেইসবুক পোস্টও শেয়ার করেন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা।
ওই পোস্টে মেয়র নাছিরের সঙ্গে তোলা একটি ছবি দিয়ে দিয়াজ লিখেছিলেন, “কত অভিমান থাকে মনে, কিন্তু আপনার সাথে কথা বললে, আপনার দিকনির্দেশনা শুনলে মুহূর্তেই মনটা ভাল হয়ে যায়। প্রিয় নেতা, আপনার তুলনা আপনাতেই….।”
এ নিয়ে খোলাচিঠিতে দিয়াজের বোন জুবাঈদা লেখেন, “নেতা, জানিনা দিয়াজের আপনার উপর কিসের অভিমান ছিল! দিয়াজ বলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি।
খোলাচিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘দিয়াজ যেহেতু আপনাকে মায়ের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করতো, তাই ওর হত্যার পর আমরা আপনার কাছে ছুটে গিয়েছিলাম। আপনি আমাদের বলেছিলেন দিয়াজ আত্মহত্যা করেছে, আপনার কিছু করার নেই। আমার ঠিক তখনি দিয়াজের পাঠানো এসএমএসের কথা মনে পড়ে গেল।’
ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ খুনের পর আলমগীর টিপুর ও তার অনুসারীরা একে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করছিল। প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়।
পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে করা দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দিয়াজকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়।
সেসময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জুবাঈদা লেখেন, ‘আমি আপনাকে অনেক বলেছি- আপনি বুকে হাত দিয়ে বলেন দিয়াজ আত্মহত্যা করেছে; যে দিয়াজ আপনার কথা যতবার উচ্চারণ করেছে, ততবার যদি আল্লাহকে ডাকতো তাহলে সে আওলিয়া হয়ে যেত; সে দিয়াজ আত্মহত্যা করতে পারে না। আপনি আমার কথা মানেননি।’
জুবাঈদা লেখেন, ‘আপনার সাহায্য না পেয়ে আমরা হতাশ হইনি। কারণ আমরা দিয়াজের রক্ত। আমরা জেনেছিলাম দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সাথে ছিল কিছু ভালো মানুষ… যারা দিয়াজের আত্মহত্যার নাটক মেনে নেয়নি।’
সত্য আজ প্রতিষ্ঠিত উল্লেখ করে নিপা লিখেছেন, আপনাকে মানতেই হবে দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে। আজ আইন আপনাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে। আপনি দিয়াজের জন্য কী করেছেন তা আমি দেখিনি, তবে আমি দেখেছি দিয়াজ আপনার জন্য কি করেছে। দিয়াজ আপনার হকদার। আপনি পারেন এখন দিয়াজের হত্যার বিচার করতে।’
দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিদের কথা উল্লেখ করে জুবাঈদা লেখেন, ‘দিয়াজ হত্যার আসামিরা, দিয়াজের মায়ের ঘর ভাংচুর মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। শুনেছি তারা আপনার সাথে দেখা করার জন্য মরিয়া… রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার জন্য।’
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ২৫ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি