তিন দিন ধরে অ্যাম্বুলেন্সে বাবার লাশ পড়ে আছে। কিন্তু দাফন করা হচ্ছে না। কারণ মৃত বাবার পেনশনের রেখে যাওয়া টাকার ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিরোধ। তা সমাধানের পরই দাফন করা হবে বাবার লাশ। এতে হতবাক স্থানীয়রা।
এ ঘটনা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার বড়উঠান ইউনিয়নে ঘটেছে।
জানা গেছে, পদ্মা অয়েল কোম্পানির সাবেক কর্মকর্তা মনির আহমদ (৬৫) গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। লাশ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেয়ার পর দাফনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার আপন সন্তানরা।
বাবার পেনশনের ৫০ লাখ টাকা ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে সন্তানরা। এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাবার লাশ দাফন করবে না বলে জানিয়ে দেয় তারা।
এতে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে পড়েছিল মনির আহমদের লাশ।
এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানে সালিশি বৈঠকও ডাকা হলেও তাতেও সমাধান না হলে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় থানা পুলিশ।
বাবার লাশ দাফনে সন্তানদের বাধা দানের ঘটনায় হতবাক স্থানীয়রা। তারা জানান, মনির আহমদের অবসরের টাকা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে মেজ মেয়ে বেবী আক্তারের সাথে অন্য ভাইবোনদের বিরোধ চলছিল। শনিবার তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে রোববার সকালে ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে সামাজিক বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু এতেও কোনো সমাধান হয়নি। ফলে মনির আহমদের লাশ তিন দিন ধরে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে রয়েছে।
জানতে চাইলে মৃত মনির আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অবসরে এসে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন। আমার মেজ বোন বেবী আক্তার আমার বাবাকে চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার নাম করে এবি ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা তোলেন। আমার ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী আলমগীর দেশে আসার জন্য রওনা হয়েছে। সে আসার পর টাকার সমঝোতার পর বাবার লাশ দাফন করা হবে।
বড় উঠান ইউপি সদস্য মোঃ সাইফুদ্দিন বলেন, মনির আহমদের অবসরের টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে ফেলার অভিযোগ এনে ভাই-বোনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। লাশ এখনো পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সে রয়েছে।
তবে বেবী আক্তার অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, আমার বাবার অবসরের কোনো টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করিনি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
মনির আহমদের ছোট মেয়ে লিপি আক্তার জানান, আমার বাবা ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আমরা তিন বোন মিলে বাবার চিকিৎসা খরচ বহন করছি। এক ভাইও কোনো সহযোগিতা করেনি। অবসরের টাকার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে অবসরের টাকার বিষয় তুলে বাবার লাশ দাফন করতে দিচ্ছে না।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ ও কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেছে। বাবার অবসরের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, বৃদ্ধের রেখে যাওয়া অবসরের টাকার জন্য তার সন্তানদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের মাধ্যমে বৃদ্ধের সন্তানদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদ নিরসন করা হয়েছে।
সোমবার লাশ দাফনের কথা রয়েছে। লাশ দাফনের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান বৃদ্ধের সন্তানদের নিয়ে বসে একটি ব্যবস্থা করবেন বলে জানা যায়।
সংবাদ সূত্রঃ ইউএনবি