রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে উদ্বোধন করেন দুই জোড়া ডেমু ট্রেন। এসব ট্রেন নতুন নয়, পুরাতন। ২০১৩ সালে কেনা ডেমু ট্রেন সংস্কার করে আনা হয় চট্টগ্রামে। পরে গত শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম-দোহাজারী ও চট্টগ্রাম-পটিয়া রুটে চলাচলের জন্য উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। কিন্তু লাভের আশায় এনে, চালু হওয়ার দুই দিনের মাথায় পড়েছে লোকসানে।
প্রথম দিন অর্থাৎ রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে দোহাজারী কমিউটার-১ ডেমু ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী গেছে মাত্র একজন যাত্রী নিয়ে। ওই যাত্রীর কাছ থেকে আয় ২৫ টাকা।
তবে ফিরতি ট্রেনে (দোহাজারী কমিউটার-২) যাত্রী এসেছেন ১৬৩ জন। ওইদিন আয় হয়েছে ৩ হাজার ২৮০ টাকা।
একই দিন দোহাজারী কমিউটার-৩ চট্টগ্রাম থেকে বিকেলে ৪৯৯ জন যাত্রী নিয়ে দোহাজারী যায়। এক ট্রিপে আয় হয় ১০ হাজার ১০০ টাকা। ফিরতি দোহাজারী কমিউটার-৪ থেকে চট্টগ্রামে যাত্রী আসেন ২৬ জন, আয় ৬৩০ টাকা।
গত সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে দোহাজারী কমিউটার-১ ডেমু ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী যায় মাত্র ৫ জন যাত্রী নিয়ে, আয় ১০০ টাকা। ফিরতি ওই ট্রেনে যাত্রী আসেন ১৩৮ জন, আয় ২ হাজার ৭৬০ টাকা।
চট্টগ্রাম-দোহাজারী ও চট্টগ্রাম-পটিয়া রুটে চার জোড়া ডেমু ট্রেন চলাচল করছে। এছাড়া চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চাঁদপুর-নোয়াখালী-লাকসাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রুটেও ৮ জোড়া ডেমু ট্রেন চলাচল করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেমু ট্রেন চালিয়ে যা আয় হয়, তা থেকে তেল খরচও উঠছে না। শুধু এসব রুটে নয়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে সব ডেমু ট্রেনের অবস্থা এমনই। লোকসান জেনেও, যেন লোকসানকেই বরণ করছে রেলওয়ে!
যাত্রীর চাপ সামাল দিতে রেলওয়েই বিরাট চাপে
যাত্রীসেবার মান বাড়াতে চীন থেকে ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডেমু (ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) ট্রেন কেনা হয়েছিল ২০১৩ সালে। প্রথম ৫ বছরে এসব ডেমু ট্রেন থেকে রেলের আয় ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর খরচ ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ সেট ডেমু ট্রেনের ১১ সেটই এখন নষ্ট।
রেলের কর্মকর্তারাই বলছেন, নষ্ট হওয়া ডেমু দেশে ঠিক করার মতো ব্যবস্থা নেই। ৬৩৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রেল এ খাত থেকে যে আয় করেছে তা দিয়ে ট্রেনগুলোতে কর্মরত গার্ড, চালক আর টিটিই’র বেতনও হয় না। এমনকি তেলের খরচও উঠছে না। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে যে ডেমু ট্রেনের আমদানি, তা চালিয়ে এখন রেলওয়েই বিরাট চাপে পড়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলে ডেমু ট্রেনে যাত্রী উঠেছেন ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার। যার বিপরীতে রেল আয় করেছে ২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এতে গড় হিসেবে প্রতিবছর ডেমু ট্রেন থেকে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এতে এ খাতে রেলের আয় তো দূরে থাক তেল খরচও উঠছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ডেমু ট্রেন চালানো মানে লোকসানে যাওয়া। চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে দুই জোড়া ডেমু ট্রেন চালু করা হয়েছে। দুই দিনও যায়নি, এরমধ্যে লোকসানে পড়েছে ট্রেনগুলি। কারণ যাত্রী নেই। এছাড়া পরিবহন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে ডেমু ট্রেন চালানো হলে, মোটামুটি যাত্রী পাওয়া যেত।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে যাত্রীর চাপ বেশি। এখানে দুই জোড়া ডেমু ট্রেন দেওয়া গেলে কিছুটা লাভ হতো। চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে যাত্রীর তুলনায় ট্রেন বেশি হয়ে গেছে। এ ছাড়া টাইম-টেবিল ঠিক না থাকায়, ওই রুটে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে যেগুলো উদ্বোধন করা হয়েছে, সেগুলো ঢাকা থেকে আনা। এই রুটে প্রথম দুই দিন চালিয়ে যাত্রী কম পেয়েছি। ডেমু ট্রেন কম দূরত্বের চলাচলের জন্য ঠিক আছে। আমরা চেষ্টা করছি, পড়ে থাকা ডেমু ট্রেনগুলো সচল করে রেলওয়ের রাজস্ব বাড়াতে।