স্ত্রীর জবানবন্দিতে স্বামী হত্যার নিষ্ঠুর বর্ণনা

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাট পৌরসভার সোনা পাহাড় এলাকা থেকে উদ্ধার করা গলাকাটা যুবক ফারুক হত্যার দায় স্বীকার করেছে তার সাবেক স্ত্রী জেসমিন আক্তার সোনিয়া। নুরুল আবছার রুবেল নামে এক যুবকের সাথে পরকীয়া প্রেমে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ফারুককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বিকেল ৪টায় জেসমিন আক্তার সোনিয়াকে উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার সোনাপাহাড় এলাকার ফকির সওদাগরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন। স্বীকারোক্তি মোতাবেক এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জেসমিন আক্তার সোনিয়ার প্রেমিক নুরুল আবছার রুবেল ও শালী আবিদা সুলতানাকে শুক্রবার বিকেলে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার সোনাপাহাড় এলাকা থেকে ফারুকের(৩৪) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে উপজেলার বারৈয়ারহাট পৌরসভার মেহদী নগর গ্রামের উত্তর সোনা পাহাড় এলাকার সুজাউল হকের পুত্র।

লাশটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির। তিনি জানান, শুক্রবার সকালে স্থানীয় লোকজন যুবকের লাশ দেখে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ সোনা পাহাড় এলাকায় গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। তার শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাত ও গলাকাটা দাগ দেখতে পান। এরপর পুলিশের অনুসন্ধানে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আটক করে পুলিশ। পরে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিহত ফারুকের ছোট ভাই মো. ইব্রাহিম বাদি হয়ে জোরারগঞ্জ থানায় শুক্রবার বিকেলে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত ফারুকের ছোট ভাই ইব্রাহিম বলেন, তার ভাই একজন কাপড় ব্যবসায়ী। বিভিন্ন দোকানে পাইকারীতে কাপড় বিক্রি করতো সে।

৫ বছর পূর্বে ছাগলনাইয়া উপজেলার গোপাল ইউনিয়নের নাঙ্গলমোড়া এলাকার জেসমিন সুলতানা সোনিয়াকে প্রেম করে বিয়ে করে। পরবর্তীতে তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান হয়। তার বয়স ৩ বছর। তিনি বলেন, তাদের সংসারে দুই বছর পূর্বে থেকে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। বিয়ের দু‘বছরের মাথায় তার ভাবী সোনিয়া ভাই ওমর ফারুকের সাথে ঘর করবে না বলে ডির্ভোস দেয়। পরে সোনিয়াকে দেন মোহরের সব টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। এসময় তাদের পুত্রসন্তান তার ভাবীর কাছে থাকার সিদ্ধান্ত হয়। সন্তানের জন্য প্রতিমাসে টাকা দিতো ওমর ফারুক।

ইব্রাহিম আরও বলেন, ডিভোর্স হয়ে গেলেও তার ভাবী সোনিয়া প্রায় সময় ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করতো। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ভাবী ভাইকে তাদের ভাড়া বাসায় জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর সোনা পাহাড় এলাকার ফকির সওদাগরের বাড়িতে যেতে বলে। ভাবীর কথামতো ভাইয়া রাত্রে ফল নিয়ে বাসায় যায়। যাওয়ার আগে ভাইয়া বাড়িতে মাকে বলে যায়। রাতে ভাবী জেসমিন আক্তার সোনিয়া, তার বোন আবিদা সুলতানা ও ভাবীর প্রেমিক রুবেল গলা কেটে ওমর ফারুককে হত্যা করে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

পুলিশের প্র্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন আক্তার সোনিয়া পুলিশের কাছে ফারুককে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির। তিনি বলেন, ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পরও ফারুক স্ত্রী সোনিয়া ও তার ছোট বোন আবিদাকে ডিস্টার্ব করতো। রুবেলের সাথে সোনিয়ার প্রেমের সম্পর্ক সে কিছুতে মেনে নিতে পারেনি। এজন্য সোনিয়া, তার বোন আবিদা ও রুবেল মিলে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

জেসমিন আক্তার সোনিয়া বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে ফারুককে আমার বাসায় আসতে বলি। রাত ১২টায় বাসায় আসা মাত্র রুবেলের মোবাইলে আমি ম্যাসেজ দিই। কিছুক্ষণ পর রুবেলও বাসায় আসে। ফারুক বাসায় এসে আমার ছোট বোনের গায়ে হাত দেয়। তখন আমি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি। এরপর আবিদা ওর দু‘পা, রুবেল দু’হাত বেঁধে ফেলে। আমি ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ফারুককে খুন করি। পরে আমরা তিনজন মিলে তার লাশ রাস্তায় ফেলে দিই। সূত্র: মানবজমিন

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, ২১ অক্টোবর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে