হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিন দিন আগে। নেই কোনো চিকিৎসক, নেই কোনো নার্স। এমনকি আয়া বুয়ার দেখা পাওয়াও যেন দুষ্কর। তিন দিন ধরে নেই খাবারও। তাই বাধ্য হয়ে সামান্য বিস্কুট আর পানিতেই ভরসা।
গত তিন দিন ধরে এমনই অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন সত্তোরোর্ধ মইনুল ইসলাম। বান্দরবান জেলার সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই ব্যক্তি কখনও ভাবতে পারেননি তিন দিন ধরে হাসপাতালে এমন অবজ্ঞায় পরে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, গত ১২/১৩ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলাম তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে গেলাম। সেখানে ভর্তি হওয়া গেল না। পরে জেনারেল হাসপাতাল হয়ে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হলাম। এই হাসপাতালে কেউ নেই। চিকিৎসক নেই, নার্স নেই, এমনকি খাবার পর্যন্ত নেই। গত তিন দিন ধরে না খেয়ে আছি। কাউকে ডেকে কিছু আনতে বলবো সে সুযোগ পর্যন্ত নেই। পরে আমার এলাকার কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক আমাকে নিয়ে আরেকটি আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে আসে। বর্তমানে এখানে বেশ ভালো রয়েছি।
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সকালে গাজী স্যারের ফোন পেয়ে জানতে পারি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে এক বৃদ্ধ তিন দিন ধরে না খেয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলাম। দেখলাম হাসপাতালে অনেকটা ভুতুড়ে পরিবেশ। তিনি যে কক্ষে থাকেন সে কক্ষের বাথরুমে উপচে পড়ছে পানি। বন্ধ করার মত কেউ নেই। দুই জন লোককে হাসপাতালের অভিযোগ জানাতেই আমার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জুড়ে দিল। পরে গাজী স্যারের অনুরোধে তাঁকে নিয়ে হালিশহরে প্রিন্স অফ চিটাগং কনভেনশন সেন্টারে স্থাপিত আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।
রোগীরা পারিবারিক বন্ধু অধ্যাপক ড. গাজী সালাউদ্দিন বলেন, রোগী অসুস্থ। তার পরিবারও হোম আইসোলেশনে আছেন। তাই কেউ দেখাশুনাও করতে পারছেন না। তিনি একা। কিন্তু সেখানে কোনো চিকিৎসা নেই।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রতিদিনই প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিচ্ছে। অথচ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা রোগের চেয়ে না খেয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম। বিষয়গুলোর সমাধান দিতে না পারলে রোগীদের মৃত্যু কূপে পরিণত হবে হাসপাতাল।
জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হাসপাতাল হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। এবিষয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. শফিকুল আলম বলেন, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে রোগীদের খাবার দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক কষ্ট করে চিকিৎসকদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া সেখানে লোকবল সংকটও রয়েছে। চিকিৎসকদের টানতে হচ্ছে রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার। এ অবস্থায় রোগীদের সামান্য অসুবিধা হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
:বাংলানিউজ