দেশের শীর্ষ কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মজলিসে শূরা গতকাল বৈঠকে মিলিত হয়ে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শেখ আহমদকে আল্লামা শফীর উত্তরসূরি নির্বাচিত করেছে। একই বৈঠকে মজলিসে শূরা মাদ্রাসার বর্তমান উপ-মহাপরিচালক মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় এবং আহমদ শফীকে উপ-মহাপরিচালক পদে নির্বাচিত করে। এর ফলে শেখ আহমদই হচ্ছেন আল্লামা শফী-পরবর্তী শীর্ষ কওমি আলেম। আল্লামা আহমদ শফী আমৃত্যু মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে থাকবেন বটে, তবে দৈনন্দিন সব কার্য পরিচালনা করবেন আল্লামা শেখ আহমদ।
নির্বাচিত হওয়ার পর আল্লামা শেখ আহমেদ বলেন, তিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মাদ্রাসার সবাইকে নিয়ে বৈঠক করবেন। সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
এক সাক্ষাৎকারে শেখ আহমদ বলেন, মজলিসে শূরা আমাকে মাদ্রাসার খেদমত করার দায়িত্ব দিয়েছে মাত্র। আমি নিজেকে সব সময় খেদমতগার মনে করব। আল্লামা আহমদ শফীর পরামর্শে কাজ করব। তার অনুপস্থিতিতে মাদ্রাসার শূরা এবং বিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করব। মাদ্রাসা ও কওমি সমাজের মঙ্গলের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করব।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক কোনো কর্মকান্ডে নিজেকে জড়াইনি এতদিন। ভবিষ্যতেও জড়াতে চাই না। বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে কওমি সমাজকে বিতর্কের মুখোমুখি করতে চাই না। মাদ্রাসায় শিক্ষার পরিবেশ ধরে রাখাই হবে মূল লক্ষ্য। এ ব্যাপারে মাদ্রাসার শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্রদের সহযোগিতা চাই। জানা যায়, মজলিসে শূরার বৈঠকে শূরার জীবিত ১১ সদস্যের সবাই উপস্থিত ছিলেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার উপ-মহাপরিচালকরা দফায় দফায় বৈঠক করেন। মাঝে মাদ্রাসার দুই সহকারী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মাওলানা আনাস মাদানীর সঙ্গে কথা বলেন। কয়েক ঘণ্টার আলোচনা শেষে শূরার ৯ সদস্য আল্লামা শেখ আহমদকে উপ-মহাপরিচালক নির্বাচিত করেন।
আল্লামা শেখ আহমদের জন্ম ১৯৫০ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মীরেরখীল গ্রামে। তার বাবা কেরামত আলী ওই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। শেখ আহমদের শিক্ষার হাতেখড়ি হয় হাটহাজারী মাদ্রাসায়। এ মাদ্রাসা থেকে ১৯৭২ সালে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন। পরের বছরই শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন হাটহাজারী মাদ্রাসায়। দীর্ঘ ৩৩ বছর শিক্ষকতা করার পর ২০০৫ সালে সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন ফটিকছড়ির নানুপুর জামেয়া উবায়দিয়া মাদ্রাসায়।
২০১৮ সালে আল্লামা আহমেদ শফীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন হাটহাজারী মাদ্রাসায়। তখন থেকে তিনি মাদ্রাসার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। হাদিস বিশ্লেষক হিসেবে আল্লামা শেখ আহমদের দেশব্যাপী সুখ্যাতি রয়েছে। পুরো দেশে তার হাজার হাজার সাবেক ছাত্র রয়েছে। এছাড়া হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, বেফাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন আল্লামা শেখ আহমদ।