জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও। দেশজুড়ে প্রায় ৮০ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী শহীদ হওয়ার দাবি করছে একটি সংগঠন। এছাড়া আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন মাদ্রাসার ছাত্ররা। ৫ আগস্ট নানা কৌশলে যৌথ বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে গণভবনমুখী স্রোতকে ত্বরান্বিত করা হয়।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিতে শহীদ হন খুবাইর বিন আব্দুল্লাহ নামে ২১ বছরের এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। যেখানে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরেন, সেই স্থানেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন দিনের পর দিন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছেলের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায় সেই প্রত্যাশা তার বাবার।
খুবাইর বিন আব্দুল্লাহর বাবা আল্লামা আব্দুর রহমান উজানী সময় সংবাদকে বলেন, সে তার মাকে বলেছিল, ‘আমার নাম না আপনারা খুবাইব রেখেছেন? হযরত খুবাইব তো শহীদ হয়েছিলেন। মা, আপনি আমার জন্য দোয়া করেন যেন আল্লাহ আমাকে শহীদ করেন।’ এখন আমার ছেলে দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। দেশের মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে।
জুলাইতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন মাস ঘুরতেই রূপ নেয় সরকার পতন আন্দোলনে। ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হলে সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে মাঠে নামেন মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। বিশেষ করে অভ্যুত্থান নস্যাৎ করতে ঢাকার সঙ্গে যখন সারা দেশের রেল ও নৌপথ বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন তাদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
এরপর ৪ আগস্ট লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় সারা দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ছিল রাজধানী। এ সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসে অবলীলায়। ঢাকার দক্ষিণ এই প্রবেশদ্বার আন্দোলনকারীদের জন্য নির্বিঘ্ন রাখতে নানাভাগে ভাগ হয়ে কর্মতৎপরতা শুরু করে তারা।
এক মাস আন্দোলনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেন। এরমধ্যে কিছু গ্রুপ পর্যবেক্ষণে রাখে যৌথ বাহিনীর তৎপরতা, কিছু গ্রুপ কাজ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আক্রমণ প্রতিহতে, কেউ আবার পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আশেপাশের এলাকার আন্দোলনকারীদের ঢাকায় প্রবেশের ব্যবস্থা করেন। এভাবে ত্রিমুখী কৌশলে যৌথ বাহিনীর কয়েক স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে দেন তারা।
সাধারণ আলেম সমাজের আহ্বায়ক মুফতি রিদওয়ান হাসান বলেন, ছাত্ররা দলে দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে কখনো পুলিশ প্রশাসনের মুখোমুখি হয়েছে, আবার কখনো তাদেরকে অন্য কাজে ব্যস্ত রেখেছে। এক পর্যায়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে গেলে আবার সামনে এগিয়েছে। এভাবে নানা কৌশলে তারা আন্দোলন করেছেন।
শুধু যাত্রাবাড়ী-সায়দাবাদ নয়, সারা দেশেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রক্ত দিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। যেই প্রত্যাশা থেকে তাদের এই আত্মত্যাগ তা বৃথা যেতে দেয়া হবে না বলে জানান অভ্যুত্থারকারী নেতারা।
মাহিন সরকার বলেন, এ আন্দোলনে রক্ত দেয়ার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা সবার আগে ছিল। সরকারের পক্ষ থেকেও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আগে যেভাবে মাদ্রসা শিক্ষার্থীদেরকে দমিয়ে রাখা হতো, সেটা আর এ দেশে যাবে না।
তরুণ আলেম প্রজন্ম নামের একটি সংগঠন আন্দোলনে শহীদ ৭৭ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে।