যানজট ভোগান্তি: নগরবাসীর মাথাব্যথার কারণ হানিফ ফ্লাইওভার

অনেকটাই অকেজো রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভার। অনিয়ম, অবহেলা আর গাড়ির অতিরিক্ত চাপে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। টোল দিয়ে সহজ যাতায়াত নিশ্চিত করতে যে ফ্লাইওভার বানানো হয়েছিলো তা এখন মাথাব্যথার কারণ।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস সকাল ৯ টায় বিশাল জ্যামের সম্মুখীন অফিসগামী মানুষ। হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশপথ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের দিকে যতদূর চোখ যায়, দেখা মিলবে শুধু যানবাহনের সারি। কখনও কখনও যা ছাড়িয়ে যায় সাইনবোর্ড পর্যন্ত।

একজন অফিসগামী ভুক্তভোগী জানান, অফিস ৯টায়। তবে, জ্যামের কারণে বাসা থেকে বের হতে হয় সকাল ৭টায়। ট্রাফিকটা যদি একটু ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতো, তাহলে এতো সকালে জ্যাম হতো না।

শুধু রোববার নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা সিলেট মহাসড়ক দিয়ে যারা হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করেন, তাদের প্রতিদিনের সকালটা হয় এমন ভোগান্তির। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায় যানজটে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা সিলেট “চার লেনের” মহাসড়কের গাড়ি ফ্লাইওভারের মুখে এসে হয়ে যায় দুই লেইন। এতে টোল ব্রীজের মুখে তৈরি হয় বিশাল জটলা। আবার এখানেও ওঠানামা করে যাত্রী। দ্রুতই যানজট ছড়িয়ে পড়ে কয়েক কিলোমিটার।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য বলেছেন, যাত্রী নামানোর পর দেখা যাচ্ছে একটি গাড়ি স্লো হচ্ছে। সেটির কারণে পেছনে আরেকটি গাড়ি স্লো হচ্ছে। এভাবেই দীর্ঘ জ্যাম সৃষ্টি হয়।

দীর্ঘ যানজট ঠেলে ফ্লাইওভারে ওঠার পর, কয়েক মিনিটে আবারও আটকে যায় চাকা। এবার ১৮ জেলার গাড়ির সাথে যুক্ত হয়, ধোলাইপাড় র‍্যাম্প ধরে আসা দক্ষিণাঞ্চলের গাড়ি।

গাড়ির চাপ প্রচণ্ড বাড়লেও নামার সংকচিত র‍্যাম্পে যানবাহনের গতি হয়ে পড়ে আরও শ্লথ। ফ্লাইওভারের ওপরই লাগে ঘন্টাখানেক। নামার পরও মুক্তি নেই। এখানে পড়তে হয় লোকাল বাস ঘুরানোর যন্ত্রণায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাস-প্রতি ৬০ টাকা নিচ্ছেন লাইনম্যান। সিটি করপোরেশনের স্লিপ ধরিয়ে, টাকা তোলে শৈলি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠান।

এবার নজর দেয়া যাক, প্রায় ১১ কিলোমিটারের এই ফ্লাইওভারটির নিচের সড়কের দিকে। পিলারের কারণে সংকুচিত নিচের সড়ক। যত্রতত্র পার্কিংয়ের পাশাপাশি ছোট দুই লেইনের দখল, বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্রুটি ছিল নির্মাণে। এরমধ্যেই ধারণক্ষমতা হারিয়েছে ফ্লাইওভারটি।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেছেন, চাইলে খুঁতির ওপর ফ্লাইওভার তৈরি করা যেতো। সেটা না করে এতো প্রশস্ত পিলার দেয়া হয়েছে। অনেকটা জেনে-বুঝেই, যাতে করে ফ্লাইওভারটির নিচের সড়কটি ব্যাবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং সবাই বাধ্য হয়ে ওপরে উঠে। এখন দেখা যাচ্ছে, অনেকগুলো সড়ক এক্সপ্রেসওয়ে ও ন্যাশনাল হাইওয়ের অংশ হয়ে গেছে। তাই, এখন কিন্তু আর হজম করা যাচ্ছে না।

অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান মনে করেন, ইতোমধ্যে লাইফটাইমের আগেই ধারণক্ষমতায় পৌঁছে গিয়েছে ফ্লাইওভারটি।

পরিচালনা প্রতিষ্ঠান স্বীকার করছে না নির্মাণ ত্রুটি। সিটি করপোরেশন বলছে, এটি ভেঙ্গে ফেলা ছাড়া বিকল্প নেই। ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উপ-ব্যবস্থাপক নাইফ উদ্দিন বলেছেন, ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তাটায় সিটি কর্পোরেশনের কিছু কাজ রয়েছে। যেই কাজগুলো করার কথা ছিল কিংবা করার কথা; সেগুলো না হলে দায়টা আমাদের ওপর এসে পড়ে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে চালু হয় গুলিস্থান যাত্রাবাড়ির ওপর দিয়ে নির্মিত হানিফ ফ্লাইওভার। এ পথে এখন স্বস্তির বদলে ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী।

Scroll to Top