বাহাত্তরের সংবিধানকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দাবি করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনতা হয়েছিল কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন হবে না –এমন অঙ্গীকারের ভিত্তিতে। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালনের কয়েক মাসের মধ্যেই সেই বিজয়কে ছিনতাই করা হয়েছিল।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে স্থানীয় আজিমউদ্দিন স্কুল মাঠে আয়োজিত এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘পাশের রাষ্ট্র তার নিজ দেশের সংবিধানের মূলনীতিগুলোকে একটি প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে একটি দালাল সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। তা দিয়ে মানুষের ইচ্ছা এবং অধিকারের বিরুদ্ধে সেই ভিনদেশি দেশের প্রেসক্রিপশনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি একটি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।
‘আর এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘদিন শাসনের নামে শোষণ করা হয়েছে। সেই স্বৈরাচার, ইসলামবিরোধী চক্র, ফ্যাসিবাদী হাসিনার দোসররা বাংলাদেশের মসনদ থেকে উৎখাত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। এ জন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।’
শেখ হাসিনার তীব্র সমালোচনা করে মামুনুল হক বলেন, ‘তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে হিন্দুত্ববাদে দীক্ষিত করতে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ; আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। আমাদের ইতিহাস সম্প্রীতির ইতিহাস। আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব ধরনের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করি।
‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত জানমালের নিরাপত্তা, নিজ নিজ উপাসনালয়ে যার যার ধর্ম পালনের নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তা দান বাংলাদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য। কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে তারা সংখ্যালঘুদের নিয়ে নাটক সাজিয়েছে। রাতের বেলায় শেখ হাসিনার দোসররা কালনাগিনী হয়ে সংখ্যালঘুদের ছোবল মারতো। আবার দিনের আলোতে ওঝা হয়ে ঝাড়তে আসতো। ৫ আগস্টের পর এসব নাটকের নায়ক-নায়িকারা আর নাই। এজন্য বাংলাদেশে আর সংখ্যালঘু নির্যাতন নাই।’
তিনি সংখ্যালঘুদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘হাসিনা ও তার দোসরা আপনাদের কল্যাণ চায় না, আপনাদের রাজনীতির হাতিয়ার বানাতে চায়। আপনারা এ হাসিনা ও তার দোসরদের প্রতি আস্থা যদি রাখেন, নিজের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারবেন। আসুন, আমরা সবাই মিলে সম্প্রীতির দেশ গড়ে তুলি। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে এই বাংলাদেশে আর কোনোদিন ফ্যাস্টিটের জায়গা হবে না। আমরা সবাই মিলে বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
তিনি ড. ইউনূস সরকারকে সতর্ক করে বলেন, ‘আলেম সমাজকে যদি বলা হয়, আমরা উড়ে এসে জুড়ে বসেছি, তাহলে ভুল করা হবে। আমরা হিন্দুত্ববাদীদের উৎখাত করেছি। এখন কেউ যদি মনে করেন বাংলাদেশে নাস্তিক্যবাদ প্রচার করবেন, নাস্তিক্যবাদ আমদানি করবেন, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে লড়াই হবে। কাজেই শিক্ষা কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিতর্কিতদের আমরা সেখানে চাই না।’
খেলাফত মজলিস কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আব্দুল করীমের সভাপতিত্বে এ গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ ও মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, সহ-বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ হাদীসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।