দেশে সামাজিক সহিংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে। এসব ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত চলতি মাসের ২৭ দিনে এক সেনা কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি খুন হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল এক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল শিক্ষার্থীসহ চারজনকে হত্যার তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ, হাসপাতাল ও পারিবারিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশে প্রায় প্রতিদিনই সামাজিক নানা কারণে হত্যার ঘটনা ঘটছে। নিরপরাধ আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত গৃহকোণও অনিরাপদ। সেখানেও হামলা চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে মানুষ। কিছু ক্ষেত্রে বলি হচ্ছে নারী ও শিশুরা।
আর্থ-সামাজিক ও মনোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি নৈতিক অবক্ষয়কে এর জন্য দায়ী করছেন অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর দুটি এলাকায় তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরে দুটি অপরাধীচক্রের সংঘর্ষে প্রাণ হারান নাসির বিশ্বাস ও মুন্না হাওলাদার নামের দুজন।
এর বাইরে সূত্রাপুরে জিন্নাহ নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এলাকায় মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে।
এ ছাড়া একই দিনে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও পার্বত্যজেলা রাঙামাটিতে সংঘর্ষ সহিংসতায় চারজন নিহত হন।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন-পরবর্তী সামাজিক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে পৃথক কোনো জরিপ না থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে হত্যার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৪ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৪৮ জন নিহত হয়েছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, এরা সবাই হত্যার শিকার হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত অর্ধশত মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। এর বাইরে নারী শিশু অপহরণ ও ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি পারিবারিক বিরোধের জের ধরেও হত্যার ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, দেশে সামাজিক নানান অস্থিরতার কারণে হত্যার পাশাপাশি নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, চলতি মাসের গত ২৭ দিনে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো এলাকায় হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো দিন একাধিক ব্যক্তি হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। আশা করি দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যারা এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেফতার করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।